ছবি প্রতীকী
বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার। তা উপেক্ষা করেই মসজিদে মসজিদে ইদের নমাজ পড়তে ভিড় জমিয়েছেন মানুষজন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং ইদ মুবারক হ্যাশট্যাগ। কিন্তু এই ইদ খুশির নয় আফরোজা, সবেদা বিবিদের কাছে। কারণ এবারের ইদ সঙ্গে এনেছে চিন্তা আর উৎকণ্ঠা। সংসারের হাল ধরতে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন প্রিয় মানুষগুলো। কেরলের বন্যায় আটকে পড়েছেন তাঁরা। কেমন আছেন কাছের মানুষগুলো? সেই ভাবনা ভাবাচ্ছে নদিয়ার বাসিন্দাদের। ধুবুলিয়ার খাজুরি, শোনডাঙ্গা, নওদাপাড়া, কাঁঠালপোতা-সহ এই জেলার কয়েকটি গ্রামের প্রায় একই অবস্থা।
[বাংলাতেও ‘মোমো’ চ্যালেঞ্জের থাবা, মারণখেলার খপ্পরে জলপাইগুড়ির ছাত্রী]
সংসারের হাল ফেরাতেই কেরলে কাজ করতে গিয়েছিলেন ইয়াত মণ্ডল। বৃহস্পতিবারই বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আসতে পারেননি। স্ত্রী আফরোজা বিবি জানান, ‘বাড়িতে আমার ছোট্ট মেয়েটা জ্বরে ভুগছে। বারবার বলছে বাবা কখন আসবে? কী উত্তর দেব আমি? ১৬ তারিখে শেষ ফোনে কথা হয়েছিল। শুনলাম, ভীষণ কষ্টে রয়েছেন। আল্লাকে ডাকছি, উনি ভালভাবে বাড়ি ফেরেন।’
অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরেছেন খাজুরি গ্রামের তিন বাসিন্দা। এঁদেরই একজন মাধাই মল্লিক নিজের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা শোনালেন, ‘কোনওভাবে প্রাণে বেঁচে ফিরতে পেরেছি। খুবই কষ্টে দিন কাটিয়েছি। খাবার ঠিকমত পাইনি। পাঁচদিন আকাশের বৃষ্টির জল ধরে রেখে খেয়েছি। পকেটে টাকা ছিল না বাড়ি ফেরার। কোনওভাবে বাড়ি ফিরতে পেরেছি।’
[পিকনিক করতে গিয়ে জল ডুবে মৃত্যু যুবকের, খুনের অভিযোগ পরিবারের]
ফিরতে পেরেছেন হাসিবুল শেখও। তার অভিজ্ঞতায়, ‘ভয়াবহ বন্যা। কত মানুষ মারা গিয়েছেন। আমরা ১২ জন গিয়েছিলাম কেরলে লেবারের কাজে। তিনজন ফিরতে পেরেছি। বাকিরা এখনও পারেনি। আল্লাকে ডাকছি, ওরাও ভালভাবে ফিরুক।’ ফিরতে না পারার এই তালিকাতেই রয়েছে খাজুরি গ্রামের আলিবুর্দিন শেখ, আনোয়ার শেখের নাম। দু’জনেই স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলেন ইদের আগে ফিরে আসবেন। পারেননি সে কথা রাখতে। আনোয়ার শেখের স্ত্রী সবেদা বিবি জানান ফেরার টিকিট কেটেও ক্যানসেল করিয়েছেন তিনি। এত বৃষ্টিতে কোনওভাবেই ফেরা সম্ভব নয় তাঁর। এভাবেই আটকে রয়েছেন এ রাজ্যের বাসিন্দারা। কেউ কেউ ফিরতে পেরেছেন। কিন্তু এখনও অনেকে আটকে রয়েছেন কেরলে। কাছের মানুষগুলো সুস্থভাবে তাড়াতাড়ি ফিরে আসুক। ইদে কেবল এই প্রার্থনাই করছেন নদিয়ার এই বাসিন্দারা।
[মদ ছুঁলেই চরম শাস্তি, নেশামুক্তি অভিযানের আইকন বীরভূমের ‘মদের গ্রাম’]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.