ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: গর্জন আছে, তবে ডেসিবেলের মাত্রা এবার অনেকটাই কম। জিটিএ নিয়ে মন্তব্যও পরস্পরবিরোধী। সকালে বলছেন জিটিএ ব্যর্থ। থাকার দরকার নেই। বেলা হতেই সুর পাল্টে জানাচ্ছেন তিনিই জিটিএ-র সর্বেসর্বা। পাহাড়ের মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনের লাগাতার চাপে বিমল গুরুংয়ের দিশাহীনতা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি গুরুংকে বার্তা দিতে পথে নেমেছে পাহাড়ের তৃণমূল নেতৃত্ব। দার্জিলিংয়ের তিন মহকুমায় তৃণমূলের বিশাল মিছিলে মোর্চা সুপ্রিমোর গ্রেপ্তারির দাবি উঠেছে।
[ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে পাহাড়, ম্যালে পর্যটকদের ভিড়]
গোর্খা জনমুক্তির মোর্চার গা-জোয়ারি সামলাতে খোদ পথে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রশাসনও তৎপর হয়েছে। দলনেত্রীর শরীরী ভাষায় চাঙ্গা পাহাড়ের তৃণমূল নেতৃত্ব বিমল গুরুংয়ের গ্রেপ্তারের দাবি সুর চড়িয়েছে। তৃণমূল নেত্রীর পরপর চালে এক্কেবারে আক্কেল গুড়ুম অবস্থা বিমল গুরুংয়ের। চাপের মুখে অবশ্য মচকাচ্ছেন না মোর্চা সভাপতি। এক্ষেত্রে তাঁর খরকুটো গোর্খাল্যান্ড। যার জিগির তুলে নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে চাইছেন গুরুং। সেই পদক্ষেপেও প্রতি মুহূর্তে স্পষ্ট তিনি যথেষ্ট চাপে রয়েছেন। কারণ আচমকা বনধ ডাকা নিয়ে মোর্চা নেতৃত্বের মধ্যে মতান্তর তৈরি হয়েছিল। এবার জিটিএ নিয়ে গুরুংয়ের নানা রকম অবস্থান দলের কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়িয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিটিএর অডিট নিয়ে পদক্ষেপের পর গুরুং জানিয়েছিলেন, জিটিএ ব্যর্থ। পাহাড়ের উন্নয়নে কিছুই করতে পারেনি। মোর্চা আর সেখানে থাকবে না। শনিবার সেই গুরুংয়ের মুখ থেকে শোনা গেল অন্য কথা। জানালেন, তিনিই জিটিএ-র সর্বেসর্বা। নিজেকে পাহাড়ের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বড়াই করতেও ছাড়েননি বিমল গুরুং। শনিবার দলের পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে গুরুংয়ের ডেরা পাতলেবাসে বসেছিল মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। যেখানে রোশন গিরি, বিনয় তামাংদের মতো মোর্চার প্রথম সারির নেতারা থাকলেও আন্দোলনের কর্মসূচি সেই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতেই আটকে থাকে। গোর্খাল্যান্ড ইস্যু টিকিয়ে রাখতে পাহাড়ে, অসম, দিল্লিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোর্চা। এমনকী পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নালিশ জানাতে চান গুরুং। তাঁকে গ্রেফতারি নিয়ে পুলিশের তৎপরতা নিয়ে অবশ্য ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়েছেন মোর্চা সভাপতি। উল্টে গুরুং হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছেন, তিনি গ্রেফতারের জন্য তৈরি। তবে এর জন্য পাহাড়ের পরিস্থিতির অবনতি হলে, তার দায় রাজ্য সরকারকে নিতে হবে।
[পাহাড়ের অশান্তি নিয়ে হাই কোর্টে দায়ের জনস্বার্থ মামলা]
সূত্রের খবর, জিটিএ নিয়ে বিমল গুরুংয়ের পরস্পর বিরোধী অবস্থান মোর্চা কর্মী, সমর্থকরা বেশ বিভ্রান্ত। জিটিএ-তে পুরোপুরি থাকলেও, মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগে জিটিএ ছাড়ার সিদ্ধান্ত কতটা ফলপ্রসু হবে তা নিয়ে মোর্চার অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। পরবর্তী নির্বাচনে জিতলে ফের জিটিএ-তে এলে মানুষের কাছে আর কতটা বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে সেই ধাঁধারও উত্তর মেলেনি।
আন্দোলনের কৌশল নিয়ে মোর্চার অন্দরে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। এই সুযোগে গুরুং শিবিরকে আরও চেপে ধরতে চাইছে তৃণমূল। মোর্চা নেতৃত্বর ওপর চাপ বাড়াতে বিমল গুরুংয়ের গ্রেফতারির দাবি করেছে পাহাড়ের ঘাসফুল নেতৃত্ব। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়ং, মিরিকে মিছিল করে গুরুয়ের শেষ রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। গুরুংয়ের নামে তোলা হয়েছে গো-ব্যাক স্লোগান। তৃণমূলের মিছিলের বহর ছিল চোখে পড়ার মতো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.