সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গুরুংয়ের প্রত্যাবর্তনে অশনি সংকেত। এবার রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়িয়ে পাহাড়বাসীর সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (PM Narendra Modi) চিঠি লিখলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বর্তমান সভাপতি বিনয় তামাং (Binay Tamang)। চিঠিতে তিনি সুকৌশলে পৃথক রাজ্যের দাবির কথাও উল্লেখ করেছেন। বিগত দিনের একাধিক চুক্তির কথা চিঠিতে উল্লেখ করে বিনয় তামাংয়ের বক্তব্য, দার্জিলিং, তরাই, ডুয়ার্সের মানুষজন দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থায় তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ করুক কেন্দ্র সরকার। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, তিন বছর পর পাহাড়ে গুরুংয়ের প্রত্যাবর্তন এবং তৃণমূলকে সমর্থনের বার্তা মোর্চার বর্তমান নেতৃত্বকে কিছুটা কোণঠাসা করছে। তাই রাজ্যের উপর চাপ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীকে এই চিঠি বিনয় তামাংয়ের।
দার্জিলিং পাহাড়বাসীর একাংশের পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি নতুন নয়। এই দাবিকে বারবারই আরও বেশি করে উসকে দিয়েছে পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলি। যার মধ্যে অন্যতম গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সুবাস ঘিসিং থেকে শুরু করে বিমল গুরুং – সকলেই কোনও না কোনও সময় এই দাবিতে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের উপর চাপ তৈরির চেষ্টা করেছে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা GTA তৈরির মাধ্যমে পাহাড়বাসীর উন্নতির রাস্তা খুলে গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে বিরত করেছিলেন ঘিসিংয়ের মতো নেতাকে। পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে যেমন পাহাড়বাসীকে পরিষেবা দিয়েছেন, তেমনই বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক বোর্ড তৈরি করে তাঁদের অধিকারকে মর্যাদা দিয়েছেন। তারপরও অবশ্য বছর তিনেক আগে পাহাড়ে গিয়ে তাঁকেই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল। দার্জিলিংয়ে প্রশাসনিক বৈঠক চলাকালীন হামলা চালায় বিমল গুরুং নেতৃত্বাধীন মোর্চা সমর্থকরা। সেই ঘটনায় UAPA ধারায় অভিযুক্ত হন বিমল গুরুং।
এরপর অবশ্য পাহাড় রাজনীতি অনেক বাঁক-মোড়ের ভিতর দিয়ে এগিয়েছে। মোর্চা নেতৃত্বে বদল এসেছে। বিমল গুরুংয়ের এককালের সতীর্থ বিনয় তামাংয়ের উপর সংগঠনের ভার দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনীত থাপাকে জিটিএ-র চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছেন। এই অবস্থায় তিন বছর অজ্ঞাতবাসের পর পুজোর সময়ে আচমকাই উদয় হন বিমল গুরুং এবং আসন্ন বিধানসভায় তৃণমূলকে ফের ক্ষমতায় ফেরানোর জন্য লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেন। এতে কিছুটা অশনি সংকেত দেখেছে মোর্চার বর্তমান নেতৃত্ব। কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আশ্বস্ত হওয়ার পরও পাহাড়ে লাগাতার গুরুংয়ের বিরোধিতায় সভা, মিছিল করে জনসমর্থন টেনে রাখার চেষ্টা করেন বিনয় তামাং, অনীত থাপারা।
তবে এবার অন্যপথে কৌশলী চাল দিলেন বিনয় তামাং। সাংবিধানিক অধিকারের দাবি নিয়ে সোজা কেন্দ্রের দরবারে গেলেন। প্রধামন্ত্রীকে লেখা চিঠির ছত্রে ছত্রে তিনি বারবার বোঝাতে চেয়েছেন যে পাহাড়বাসী প্রকৃত উন্নয়ন থেকে কতটা দূরে। এখন প্রশ্ন উঠছে, গুরুংয়ের প্রত্যাবর্তনে নিজেদের ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা করছেন মোর্চা নেতারা? তাই কি রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়াতে চাইছেন? বিনয় তামাংয়ের চিঠি কিন্তু সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। বিধানসভা ভোটের আগে এও এক স্ট্র্যাটেজি পাহাড়ের নেতাদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.