শুভদীপ রায়নন্দী, শিলিগুড়ি: বছর তিন আগে উত্তরবঙ্গে বিজেপি’র সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি করতে নকশালবাড়ির গরিব আদিবাসী মাহালি দম্পতির বাড়িতে পাত পেড়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন অমিত শাহ (Amit Shah), তৎকালীন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। এখন তাঁর পদমর্যাদা বদলেছে। এখন তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এবার বাংলা সফরে এসে বাঁকুড়ার বিভীষণ হাঁসদা নামে এক আদিবাসীর বাড়িতে একইভাবে মধ্যাহ্নভোজ করেন তিনি। আর আজকের দিনে ঠিক এমনই সময়ে রাজ্য সরকার কার্যত পালটা চাল দিল। বৃহস্পতিবারই নকশালবাড়ির (Nakshalbari) সেই গৃহকর্ত্রী গীতা মাহালি সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়ে যোগ দিলেন কাজে। এই চাকরি দরিদ্র পরিবারের এতদিনের সংগ্রামে যেন ইতি টানল। খুশি তাঁরা প্রত্যেকে।
সময়টা ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল। অমিত শাহ তাঁদের বাড়ির অতিথি হতেই ওই আদিবাসী দম্পতিকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে। যদিও সেই সময় ওই আদিবাসী পরিবারকে সবরকমভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু অমিত শাহ যাওয়ার পর আর কোনও বিজেপি নেতাই মাহালি পরিবারের খোঁজ নেয়নি বলে অভিযোগের সুরে জানাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াল রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের আবাস যোজনা থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সুযোগ সুবিধা পেয়েছে ওই পরিবার। এবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গীতা মাহালিকে হোমগার্ডের (Home Guard) চাকরি দেওয়া হল। বৃহস্পতিবার সকালে নকশালবাড়ি থানায় গীতা মাহালির হাতে হোমগার্ডে নিয়োগ পত্র তুলে দেওয়া হয়। তিনি এদিনই নকশালবাড়ি থানায় গিয়ে কাজে যোগ দেন। সবরকম প্রতিশ্রুতি পূরণ করায় মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মাহালি দম্পতি।
এ নিয়ে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “একটা গরিব আদিবাসী দম্পতিকে নিয়ে যেভাবে রাজনীতি করা হয়েছে, তা খুবই নিন্দনীয়। পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের কোনও খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। কিন্তু আমি নিজে তাঁদের খবরাখবর নিয়েছি। যতটা পেরেছি, সাহায্য করার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ওঁদের খবর নিয়েছেন। এবার তাঁরই নির্দেশে গীতা মাহালিকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেন, তা করে দেখান। রাজনীতির জন্য বলেন না।” চাকরি পেয়ে গীতা মাহালির প্রতিক্রিয়া, “মুখ্যমন্ত্রী এবং পর্যটনমন্ত্রী নিজেদের প্রতিশ্রুতি রেখেছেন আমরা খুব খুশি।”
তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনীতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকারের কথায়, “বিজেপি যা করে, সব লোকদেখানো এবং সংবাদের শিরোনামে থাকার জন্য। লোক দেখিয়ে অমিত শাহ মধ্যাহ্নভোজ করলেন আর ভুরিভুরি প্রতিশ্রুতিই সার। মানুষের পাশে কে থাকে, ফের একবার তার প্রমাণ মিলল।” এই দাবি উড়িয়ে শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সম্পাদক আনন্দময় বর্মন বলেন, “বিজেপি ওই দম্পতিকে নিয়ে কোনও রাজনীতি করেনি। অমিত শাহ যেতেই তৃণমূল জোর করে ওই দম্পতিকে নিয়ে গিয়ে দলে যোগ দেওয়ায়। রাজনীতি তৃণমূলই করেছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.