ছেঁড়া টাকা
রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: দীর্ঘদিনের জমানো টাকার তোড়া রাখা ছিল তালাবন্ধ সিন্দুকে। হঠাৎ করে টাকার দরকার হয়ে পড়ায় সিন্দুক খুলেছিলেন গৃহকর্তা বিমল রায়। তালা খুলে সিন্দুকের ডালা তুলতেই ফালাকাটা শহরের আশ্রমপাড়ার ছাপোষা গেরস্থ বিমলবাবুর মাথায় হাত!
হায়, হায়! যত্ন করে রাখা অতগুলো টাকার নোটের সবগুলো নিখুত ভাবে কে যেন কেটে দু’খণ্ড করে রেখে দিয়েছে!
ভৌতিক কাণ্ড না কি?
বিমলবাবুর পাশেই থাকেন শুভাশিস ভৌমিক। রাজ্য সরকারের কর্মী। ভূত-প্রেতে তেমন বিশ্বাস নেই! পাশের বাড়ির ঘটনাকে ‘ভৌতিক’ বলতে তাই প্রবল আপত্তিও। কিন্তু তাঁরও সেই ‘বিজ্ঞান সচেতন আত্মবিশ্বাস’ টোল খেতে সময় লাগল না। দিন সাতেক আগে সাংসারিক প্রয়োজনে বিছানার নিচে সযত্নে আগাম ১৫০০ টাকা রেখে দিয়েছিলেন। সাত দিন পর সেই টাকা বার করতে গিয়ে শুভাশিসবাবুর চক্ষু চড়কগাছ! মোট পনেরোটা ১০০ টাকার নোটের সবকটাই মাঝখান দিয়ে ছেঁড়া। একেবারে দু’টুকরো! ঠিক যেমনটা হয়েছিল পাশের বাড়িতে।
[ বোমা বিস্ফোরণে হারিয়েছিল হাত, কৃত্রিম হাতেই হাসি ফিরল পৌলমীর মুখে ]
একটা না! পরপর দুটো এমন ভূতুড়ে কাণ্ডের পর রীতিমতো এখন শোরগোল আলিপুরদুয়ারের এই শহরজুড়ে। হু হু করে ‘ভূতের উৎপাত’-এর এই খবর রটেছে আশপাশেও। যা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে জেলাজুড়ে। আর তাতেই বেরিয়ে আসছে আরও অনেক এমন ঘটনার কথা। সবই ওই আশ্রমপাড়া বা তার আশপাশের। সাধারণ বুদ্ধিতে যার আশু ব্যাখ্যা মিলছে না।
যেমন, আশ্রমপাড়ার অনেকেই নাকি দেখেছেন, বাড়ির উঠোনে জামাকাপড় মেলার দড়ি কথা নেই বার্তা নেই, আচমকা মাঝ বরাবর পটাং করে ছিঁড়ে যাচ্ছে। কারও বাড়িতে ঘরের ভিতর রাখা লোহার টেবিল ফ্যান ভেঙে পড়ে যাচ্ছে হুড়মুড়িয়ে। কারও বাড়িতে আবার অন্য কোনও উৎপাত।
‘নিশ্চয়ই এ কোনও ভূত! তা ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না!’ সরবে ঘোষণা করে দিয়েছেন ফালাকাটাবাসী। জব্বর একখানা নামও দেওয়া হয়েছে এই ভূতের– ‘ছেঁড়া ভূত’। এবং গোটা এলাকা এখন কার্যত সেই ‘ছেঁড়া ভূতে’র আতঙ্কে ভুগছে।
[ নিখোঁজের চারদিন পর হাওড়া থেকে উদ্ধার মেদিনীপুরের কলেজ ছাত্র ]
প্রথম প্রথম স্থানীয় যুক্তিবাদীরা এ নিয়ে নানা গ্রহণযোগ্য বা গ্রাহ্য ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ‘ভুতের তত্ত্বে’ আমজনতার প্রবল ‘বিশ্বাস’-এর সামনে তাঁদের ‘চুপসে যেতে’ সময় লাগেনি। দু’একজন সামান্য অবিশ্বাসী যে তারমধ্যেও নেই, তা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। যেমন কড়কড়ে ১৫০০ টাকা খোয়ানো আশ্রমপাড়ার সুভাশিসবাবু নিজেই ভুত তত্ত্বে বিশ্বাস করছেন না। তাঁর বক্তব্য, “ভূত-ফুতে বিশ্বাস করিনা। আবার ঘটনাটিকে চুরি বলেও মনে হচ্ছে না। তবে এটাও ঠিক যে বাড়িতে থাকতে সবাই ভয় পাচ্ছে। এই অবস্থায় কি করব, বুঝে উঠতে পারছি না।” স্থানীয় বিজ্ঞান কর্মী প্রবীর রায়চৌধুরী বলছেন, “ভূতের বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে। কেউ কোনও মতলবে এসব করছে। পুলিশকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে এই ঘটনার তদন্ত করতে হবে। তাহলেই সতি্যটা প্রকাশ পাবে।”
কিন্তু এই আশ্রমপাড়ার আরেক গৃহবধূ শতাব্দী রায়ের দৃঢ় বিশ্বাস, এটি ভূতেরই কাণ্ড। তাঁর কথায়, “ভূতকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না ঠিকই! কিন্তু তার কাণ্ডকারখানা সব চোখের সামনেই হচ্ছে। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাড়ির উঠোনে জামাকাপড় মেলার দড়ি ছিঁড়ে যেতে দেখেছি। এরপরও বিশ্বাস না করে থাকি কী করে?”
[ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নর্দমায় পড়ে মৃত্যু শিশুকন্যার ]
এই ছেড়া ভুত কাণ্ডে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে ফালাকাটা থানার পুলিশ! ভুতের হাত থেকে বাঁচতে সব ছেড়ে ফালাকাটাবাসী যে তাদেরই দ্বারস্থ হয়েছে। বাধ্য হয়ে তদন্তে নামতেও হয়েছে। কিন্তু গুলি-বন্দুক-হাতকড়া দিয়ে কি আর ভুতকে বাগানো যায়? তাছাড়া পুলিশ বলে কি মানুষ নয়? তাঁদেরও কি ভুতের ভয় নেই? আর পুলিশকে ভুত বেজায় ভয় পায়, এমন প্রমাণও নেই!
কিন্তু উপায়ই বা কী? খাঁকি উর্দির মানসম্মান নিয়ে যে টানাটানি! ফালাকাটা থানার আইসি বিনোদ গজমের বলছেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এখন চারিদিকে ছেলেধরা আতঙ্ক চলছে। ফলে এই ঘটনাটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এর পিছনে কোনও অপরাধচক্র কাজ করছে কিনা, তা খুঁজে বার করতে এলাকায় পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকৃত বিষয়টি সামনে আসবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.