ছবিতে এই সেই হনুমান মন্দির, ছবি: সুকান্ত চক্রবর্তী।
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: হনুমানের স্মৃতিতে হল মন্দির৷ চলল সারাদিন ধরে যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণ, ভূরিভোজ; সবই৷ এমনকী, মন্দির উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন বিধায়ক থেকে পুর কাউন্সিলর পর্যন্ত অনেক নামী ব্যক্তি৷ ঘাটাল শহরের কৃষ্ণনগরের সদ্য নির্মিত হনুমান মন্দির ঘিরে এলাকার মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো৷ তবে বজরংবলীর মন্দির নয়, পাড়ার প্রিয় হনুমানের স্মৃতিতে মন্দির। আর ২০১৯-র ভোটের আগে তৃণমূলের বিধায়ক এলেন সেই হনুমান মন্দির উদ্বোধনে। এই ঘটনায় অন্য ইঙ্গিত দেখছেন বিরোধীরা। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার রাতে পাঁচ হাজার লোকের পেট পুরে খাওয়ানোর বন্দোবস্তও করেছিলেন উদ্যোক্তারা৷ হঠাৎ এমন আয়োজন কেন?
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, গত আগস্টের আট তারিখে একটি দল ছাড়া পূর্ণবয়স্ক হনুমান কৃষ্ণনগরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল৷ হনুমানটিকে ফেলে রেখে অন্যরা এলাকা ছেড়ে চলে যায়৷ অসুস্থ হনুমানটি রাস্তার পাশে পড়ে ধুঁকতে থাকে৷ তা দেখে এলাকারই কিছু যুবক অসুস্থ হনুমানটির সেবা করেন৷ ডাক্তার ডেকে চিকিৎসাও করিয়েছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু সেইদিন রাতেই হনুমানটি মারা যায়৷ রামভক্ত হনুমানের মৃত্যুতে ভীষণ ভেঙে পড়েন অরূপ ধাড়া, রঞ্জন মালিক, স্বপন দাস, বাবাই দাসরা৷ যথারীতি হিন্দুরীতি মেনে সৎকারও করা হয় হনুমানটির৷ সেদিনই তাঁরা শপথ নেন, এলাকায় হনুমানজির মন্দির গড়ে তোলা হবে৷ কোমর বেঁধে নেমে পড়েন অরূপবাবুরা৷ বাড়ি বাড়ি চাঁদা তোলা হয়৷ এলাকারই বিশিষ্ট মানুষ রঞ্জন পাল মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন৷ শুরু হয় মন্দির নির্মাণের কাজ৷ মন্দির নির্মাণের পর প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুরোহিত ডেকে চলল হোমযজ্ঞ৷ মন্দির উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন ঘাটালের বিধায়ক শংকর দোলুই। সঙ্গে ছিলেন ঘাটাল পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুহিন বেরা৷ সারাদিন ধরে চলল নাম সংকীর্তন৷ শ্রীখোল, করতাল, শঙ্খ ধ্বনি সবই চলল সমানে৷ মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো৷ ধূপ ও ধুনোর গন্ধে মেতেছিল গোটা মন্দির চত্বর। সারাক্ষণ চলে রামধুন গান৷ করা হয় প্রসাদ বিতরণ৷ নেমন্তন্ন করা হয় এলাকার সমস্ত মানুষজনকে৷ রাতে পাঁচ হাজারের বেশি লোককে খিচুড়ি খাওয়ানো হয়৷ আলু ভাজা, বাঁধাকপির তরকারি, চাটনি, দই, মিষ্টি সবই ছিল পাতে৷ যাকে বলে ভুরিভোজ৷ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এলাকার কাউন্সিলর তুহিন বেরা বলেন, হনুমানকে শুধু রামভক্ত হিসাবে দেখা হচ্ছে না। একটি অসুস্থ প্রাণীর জন্য এলাকার মানুষজন যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন তা খুবই প্রশংসাযোগ্য৷” নিজে হাতে হনুমানের চিকিৎসা করেও বাঁচাতে পারলেন না বলে এখনও আফশোষ করে চলেছেন অরূপ ধাড়া, রঞ্জন মালিকরা৷ তাঁরা বলেন, “হনুমানকে আমরা শুধু প্রাণী হিসাবে দেখছি না৷ স্বয়ং ভগবান রামের ভক্ত হল হনুমান৷ তাঁর স্মৃতিতে আমরা চাঁদা তুলে মন্দির নির্মাণ করেছি। আমরা খুবই খুশি৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.