Advertisement
Advertisement

পড়া বন্ধ, প্রতিবন্ধী মায়ের সঙ্গে পথে পথে ভিক্ষা করছে মেধাবী মহাদেব

ট্রাইসাইকেলে মাকে চাপিয়ে গ্রাম গ্রামে ঘুরছে কিশোর৷

Ghatal student leaves study to earn money for disabled mother

ছবি- সুকান্ত চক্রবর্তী

Published by: Suparna Majumder
  • Posted:August 1, 2018 12:32 pm
  • Updated:August 1, 2018 12:32 pm

শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: বাবা যতদিন ছিলেন, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইটা চালিয়েছিল। পড়াশোনার জেদ হার মানিয়েছিল সব প্রতিকূলতাকে। কিন্তু বাবার অকাল মৃত্যু তাকে থমকে দিল৷ মা শারীরিক প্রতিবন্ধী৷ তাই পড়া ছেড়ে মাকে নিয়ে ভিক্ষায় নামল কিশোর৷ ট্রাইসাইকেলে মাকে চাপিয়ে গ্রাম গ্রামে ঘুরছে এক কিশোর৷ মদনমোহনপুরে এটি খুব চেনা দৃশ্য৷ বাবা রাজেন্দ্রনাথ মণ্ডল গত বছর কঠিন অসুখে মারা গিয়েছেন৷ মা মালতী মণ্ডল শারীরিক প্রতিবন্ধী৷ দু’টি পা-ই অকেজো৷ জমি জায়গা একেবারেই নেই৷ এমনকী বাস্তুভিটাটুকুও তাঁদের নয়৷ তাহলে সংসার চলবে কিসে? দু’জনের পেট৷ তাই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই ইতি টানতে বাধ্য হয় মহাদেব মণ্ডল৷ অথচ তাঁরও ইচ্ছা ছিল অনেকের মতো পড়াশুনা করে বড় হয়ে মায়ের দুঃখ ঘোচাবে৷ কিন্তু তা আর হল কই?  নিজের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে চোখের কোনা চিক চিক করে উঠে মহাদেবের৷

রাজেন্দ্রনাথের আদি বাড়ি ছিল বিহারে৷ দিনমজুরি করতে চন্দ্রকোণায় চলে এসেছিল বছর কুড়ি আগে৷ চন্দ্রকোণার মদনমোহনপুর গ্রামেই দিনমজুরি করতেন তিনি৷ গ্রামেরই জনৈক রতন পাত্রের কিশোরী কন্যা মালতী৷ প্রতিবন্ধী৷ দুই পা অকেজো৷ কোনরকমে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করে মালতী৷ সেই মালতীকেই বিয়ে করতে চান রাজেন্দ্রনাথ৷ শাস্ত্রমতে বিয়েও হয়ে যায় তাঁদের৷ রতনবাবুরই ভিটের এক পাশে ছোট্ট বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন রাজেন্দ্রনাথ৷ বাম আমলে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের সুপারিশে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি হয়৷ মালতীদেবীকে ট্রাইসাইকেলও দেওয়া হয়৷ তাঁদের ভালবাসার ফসল এই মহাদেব৷ চলছিল বেশ৷ গত বছর কঠিন অসুখে মারা গেলেন রাজেন্দ্রনাথ৷ মালতিদেবী পড়লেন অথৈ জলে৷ আয় বন্ধ৷ সংসার চলবে কেমন করে? পরিস্থিতি দেখে মহাদেবই পড়ায় ইতি টানতে বাধ্য হয়৷

Advertisement

[খারাপ আবহাওয়ার জেরে ফের বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ৭ মৎস্যজীবী]

অন্তোদয় যোজনায় মালতীদেবী পান ৪ কেজি চাল আর ৪ কেজি আটা৷ আর শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসাবে মাসে ৬০০ টাকা সরকারি ভাতা পান তিনি৷ মালতীদেবীর কথায়, “ এতে কি আর মা-বেটার রোজকার খরচ চলে? তাই দু’জনে মিলে ভিক্ষায় বেরিয়ে পড়ি৷ সারা দিনে যা জোটে, তা দিয়ে দু’জনের চলে যায়৷” মাকে ট্রাইসাইকেলে চাপিয়ে গ্রামের পথে বেরিয়ে পড়ে মহাদেব৷ বুকে একরাশ হতাশা৷ কী হবে তাঁর ভবিষ্যৎ?

সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে খবর যায় চন্দ্রকোণা দুই নম্বর ব্লকের বিডিওর কাছে৷ বিডিও শ্বাশতপ্রকাশ লাহিড়ী বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত৷ তিনি বলেন, “পরিবারটিকে মাসে একটি জিআর(১২ কেজি চাল)-সহ আরও কিছু দেওয়া যায় কিনা ভাবছি৷ ছেলেটিকে পুনরায় স্কুলে ভরতি করা হবে৷ এ নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথাও বলব৷” চন্দ্রকোণার জেলা পরিষদ সদস্য জগজিৎ সরকার পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন৷ তিনি বলেন,  এ নিয়ে বিডিওর সঙ্গে আলোচনা করা হবে৷ ছেলেটি যাতে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে। এদিকে বিদ্যুতের বিল দিতে পারেনি, লাইন কাটা গিয়েছে। সন্ধে নামলেই বাড়ি অন্ধকার। আর তার মাঝেই সুদিনের আলোর অপেক্ষায় মহাদেব।

[নাগরিকপঞ্জির প্রতিবাদ, বনগাঁ ও হাসনাবাদ শাখায় রেল অবরোধ মতুয়াদের]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement