Advertisement
Advertisement

Breaking News

Ghatal Master Plan

Exclusive: কেন্দ্র-রাজ্য দড়ি টানাটানিতে এখনও তিমিরে Ghatal Master Plan, জেনে নিন বিস্তারিত

কবে দুর্ভোগ থেকে মিলবে রেহাই, প্রশ্ন ঘাটালবাসীর।

Ghatal Master plan on old storage due to Centre-state feud। Sangbad Pratidin
Published by: Sayani Sen
  • Posted:August 13, 2021 12:52 pm
  • Updated:August 13, 2021 2:49 pm  

শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: প্রায় প্রতি বছর বর্ষায় জলে ভাসে ঘাটাল। জলের তলায় চলে যায় বাড়ি, চাষের জমি। দুর্ভোগই ভরসা স্থানীয় বাসিন্দাদের। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান (Ghatal Master Plan) বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে প্লাবন পরিস্থিত বলেই দাবি সকলের। যদিও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত না হওয়ার জন্য কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত জারি রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ইতিবৃত্ত।

ঘাটাল এলাকায় মূলত শিলাবতী, কংসাবতী এবং দ্বারকেশ্বর নদের শাখা নদী ঝুমির লীলাভূমি হিসাবে পরিচিত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলস্বরূপ স্থানীয় ভূস্বামীরা এই নদীগুলির বন্যা প্রবণতা ঠেকাতে সার্কিট বাঁধ দিয়ে নিজেদের জমিদারীতে নিচু এলাকাগুলিকে বন্যা থেকে বাঁচিয়ে আবাদি জমি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। সেই জমিদার নেই। কিন্তু জমিদারি বাঁধগুলি আজও রয়ে গিয়েছে। এই জমিদারি বাঁধগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। তার ফলে বাঁধগুলি ভেঙেই মূলত ঘাটাল (Ghatal) এলাকায় বন্যা দেখা দেয় ফি বছর। উলটোদিকে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি নদী বাঁধ উপচে ছড়িয়ে পড়তে না পেরে নদীতেই জমতে থাকে পলি মাটি। ফলে নদীর জল ধারণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর ফি বছর বন্যা প্রবণতাও বাড়তে থাকে।

Advertisement

Ghatal-Flood-Situation

[আরও পড়ুন: Malda’র ভূতনির চরে গঙ্গার বাঁধ ভেঙে প্লাবন, নির্মাণকারী সংস্থার ভূমিকায় প্রশ্ন]

জেলা সেচ দপ্তর সূত্রে খবর, কংসাবতী নদী মেদিনীপুরের সদর ব্লকে দু’টি ভাগ হয়ে একটি ওল্ড কাঁসাই হয়ে ঘাটাল মহকুমার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। অন্যটি নিউ কাঁসাই নাম নিয়ে পাঁশকুড়া হয়ে হলদি নদীতে মিশেছে। বন্যা প্রবাহের ৭০ ভাগ জল ওল্ড কাঁসাই ও ৩০ ভাগ জল নিউ কাঁসাই দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে আজও। যার ফলে ঘাটালে বন্যা প্রবণতা অনেক বেশি। ঘাটাল এলাকায় বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির প্রধান কারণ শিলাবতী নদী। পলি জমতে জমতে নদীর ধারণ ও বহন ক্ষমতা বর্তমানে তলানিতে ঠেকেছে। ইংরেজ আমল থেকেই শিলাবতী নদী সংস্কার করা হয়নি বলে জানিয়েছে সেচ দপ্তর। ফলে বন্যা প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

এই বন্যা প্রবণতা ঠেকাতে নদী সংস্কারের কথা ১৯৫২ সালে লোকসভায় প্রথম তুলে ধরেন ঘাটালের তৎকালীন বাম সাংসদ নিকুঞ্জবিহারী চৌধুরী। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৯৫৯ সালে নদী বিশেষজ্ঞ মান সিংয়ের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেন। সেই কমিশনই ঘাটাল এলাকায় বন্যা প্রতিরোধ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট জমা দেয়। তারপর তা আঁতুরঘরে চলে যায়। ১৯৭৭ সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর ১৯৮২ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি সেচ মন্ত্রী প্রভাস রায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের শিলান্যাস করেন। সেই শিলান্যাসই সম্বল। কাজ একটুও এগোয়নি।

Ghatal-Flood-Situation

ডাস্টবিনে চলে যায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। তারপর থেকে শুধুই রাজনীতির আর রাজনীতি। তথ্য বলছে, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের আওতায় রয়েছে দুই মেদিনীপুরের ১২ টি ব্লক ও পাঁচটি পৌর এলাকা। এর আয়তন ১৬৫৯ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বহুবার বন্যা হয়েছে। প্রচুর ঘরবাড়ি, ফসল, জীবনহানিও হয়েছে। একটি পরিসংখ্যান বলছে, এ পর্যন্ত বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। হঠাৎ ফের ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয় ২০০৮ সালে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর উদ্যোগে ফের নাড়াচাড়া শুরু হয় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে। কেন্দ্রীয় সংস্থা WAPCOS কে দিয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। ১৪৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে সংস্থাষ্টি। তা রাজ্য সরকার অনুমোদন করে কেন্দ্র সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

[আরও পড়ুন: তৃণমূলের কর্মসূচিতে ‘Suvendu Adhikari জিন্দাবাদ’ স্লোগান! ভাইরাল ভিডিও]

ইতিমধ্যেই রাজ্যে পালাবদল ঘটে যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) হস্তক্ষেপে ফের মাস্টার প্ল্যান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০১৫ সালে গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশন দ্বারা অনুমোদিত হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্রের জন্য যায় গোটা বিষয়টি। প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত অনুমোদন পেলেও অর্থ দপ্তরের ছাড়পত্র আজও পায়নি। ইতিমধ্যেই প্রকল্প খরচ বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। রাজ্যে একের পর এক সেচ মন্ত্রী বদল ঘটেছে। ঘাটালের নদীর গতিপথ থেকে শুরু করে ভৌগোলিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে রাজনীতি কিন্তু থেমে নেই। সর্বশেষ যা জানা গিয়েছে, প্রকল্প খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

বর্তমান সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, কেন্দ্র সরকার রাজনৈতিক কারণে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের অনুমোদন দিচ্ছে না। তা সত্ত্বেও আমাদের প্রচেষ্টা থেমে নেই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে দরবার করা হবে। ” ঘাটালের সাংসদ দেব বলেছেন, “দিদি প্রধানমন্ত্রী না হলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ হবে না।”

Ghatal

ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটের গলায় অন্য সুর। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র সরকার টাকা দিয়েছে। রাজ্য কাজ করছে না।  ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, দুই সরকারেরই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ নিয়ে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। কাজের থেকে রাজনীতির করতেই ব্যস্ত থেকেছেন সরকারের লোকজন। ফলে ঘাটাল মাস্টার প্লানের কাজ সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছে। এটা ঘাটালের মানুষের দুর্ভাগ্য।”

দেখুন ভিডিও:

[আরও পড়ুন: ‘উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করব’, Gurung-এর সঙ্গে দেখা করেই অবস্থান স্পষ্ট করলেন Binay Tamang]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement