ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: হোয়াটসঅ্যাপে দরদাম। লেনদেন। চাইলে মিলবে হাতে গরম ভিডিও ক্লিপিং। কুমিরছানা থেকে বাঘের বাচ্চা! টাকা ফেললে সবই হাতের মুঠোয়। নজরবন্দি বিহারের আলমগঞ্জ। সেখানে বসেই চলছে আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী পাচার চক্র। একজন, দু’জন নয়৷ কারবারে যুক্ত গোটা গ্রাম। চারদিকে ‘মিলিশিয়া’র ঘেরাটোপ৷ বার বার বলা সত্ত্বেও অভিযানে নারাজ সে রাজ্যের পুলিশ ও বন দফতর৷ এমনটাই অভিযোগ ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর৷ ফলে এবার আলমগঞ্জ নিয়ে তারা রিপোর্ট পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয়স্তরে। প্রয়োজনে বিশেষ বাহিনী নিয়ে অপারেশনের ভাবনা। সেইসঙ্গে চক্রের আর কোথায় কোথায় ঘাঁটি রয়েছে তা জানতে শুরু হয়েছে তদন্ত৷ আর তাতেই উঠে এসেছে হাড় হিম করা তথ্য। আলমগঞ্জের বন্যপ্রাণী পাচারের কারবারিদের সক্রিয় নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে রয়েছে এ রাজ্যের সুন্দরবন থেকে উত্তরবঙ্গের বক্সা, জলদাপাড়ার পাশাপাশি মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচলপ্রদেশে৷
[স্টেশন চত্বরে মায়ের সামনে কিশোরীর শ্লীলতাহানি, জালে অভিযুক্ত]
দিন কয়েক আগে উত্তরবঙ্গে ঘড়িয়ালের বাচ্চা-সহ ধরা পড়া শের খানের কাছ থেকেই আলমগঞ্জের কারবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন বনকর্তারা৷ ধৃত ওই পাচারকারীর মোবাইলে থাকা ভিডিও দেখে রীতিমতো চমকে উঠেছেন তাঁরা৷ তাজ্জব দুঁদে গোয়েন্দারাও। কুমির ছানা থেকে বাঘের বাচ্চা, ভালুক, চিতা, বানর, সামুদ্রিক কচ্ছপ, শের খান ওরফে মহম্মদ সামসুদ্দিন ও তার ছায়াসঙ্গী মহম্মদ আসিফের মোবাইলের ভিডিওতে হদিশ মিলেছে সবই৷ বনকর্তারা জানতে পেরেছেন, জ্যান্ত প্রাণী তো বটেই, কারবারের প্রয়োজনে তাদের মেরে হাড়, মাংস, চামড়া বিক্রিতেও হাত কাঁপে না আলমগঞ্জের পাচারকারীদের৷ ধৃত শের খানের মোবাইলে অন্তত পাঁচটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের খোঁজ মিলেছে৷ সেসব গ্রুপের কারবারে যুক্তরা রয়েছে৷ নিয়মিত মেসেজে কথাবার্তা হত তাদের৷ কোথাও কোনও ক্রেতা মিললে কিংবা অর্ডার অনুযায়ী আইটেমের দরদাম ঠিক করতে মেসেজ চালাচালি হত ওইসব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে৷
[ত্রিপুরা তৃণমূলে বড় ভাঙন, বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন ৬ বিধায়ক]
বন দফতরের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে এমন বেশ কিছু ফোন নম্বর এসেছে৷ তারই সূত্র ধরে তদন্ত চলছে৷ ফাঁদ পাতা হয়েছে চক্রের পান্ডাদের ধরতে৷ চমকে দেওয়া তথ্য হল, ধৃতরা জেরায় জানিয়েছে, পাটনার কাছে আলমগঞ্জ গ্রামে দুই থেকে তিন মাসের বাঘের বাচ্চা বিকোচ্ছে দশ লাখে৷ ওড়িশার বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে এসে কারবারের জন্য কুমির ছানাদের রাখতে জলাশয় রয়েছে গ্রামে৷ এর আগে তাইল্যান্ডে বাঘের বাচ্চা—সহ ধরা পড়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছে৷ কিন্তু বিহারে গোটা গ্রামকে ডেরা বানিয়ে বন্যপ্রাণী পাচারের কারবার চলার খবর সামনে আসতে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল৷ রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন বলেছেন, “দিল্লিকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। এবার তাদেরকেই পদক্ষেপ করতে হবে৷ কারণ, আমাদের পক্ষে তো আর অন্য রাজ্যে গিয়ে অভিযান চালানো সম্ভব নয়।” জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের এডিএফও রাহুলদেব মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “আলমগঞ্জ সম্পর্কে ‘ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো’-সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব সংস্থা কাজ করে তাদের জানানো হয়েছে৷” ওই আধিকারিকের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই আলমগঞ্জে বন্যপ্রাণী বেচাকেনার কারবার চলে আসছে৷ একসময় সেখান থেকে সার্কাসে জন্তুদের সাপ্লাই করা হত৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.