ছবি: অরিজিৎ সাহা।
দেবব্রত মণ্ডল ও নব্যেন্দু হাজরা,গঙ্গাসাগর: করোনার চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে শুরু হয়ে গিয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela)। শীতকে সঙ্গী করে শুক্রবার, মকর সংক্রান্তিতে সাগরের জলে পুণ্যস্নান সারছেন সকলে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুণ্যার্থীদের স্নানের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমুদ্রতীরে তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ই- স্নানের কাউন্টার। এই কাউন্টার থেকেই পুণ্যার্থীরা পবিত্র গঙ্গা জল নিয়ে বিশ্বাসের সঙ্গে পুণ্যস্নান করতে পারবেন। গঙ্গাসাগরে বিভিন্ন প্রান্তে রাখা হয়েছে ড্রোনের (Drone) মাধ্যমে স্নানের ব্যবস্থা।
সংক্রমণ রুখতে এই বছর গঙ্গাসাগর মেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাস্ক, জোড়া ডোজ ভ্যাকসিনের রিপোর্ট, RT-PCR নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া গঙ্গাসাগরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। একত্রে ৫০ জনের বেশি পুণ্যার্থীদের সমুদ্র সৈকতে জমায়েত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এই নিয়মগুলি খুব ভালভাবে মেনে চলা হচ্ছে। তার জন্য নজরদারিও চলছে।
গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের জন্য সমুদ্রতীরে রাখা হয়েছে অত্যাধুনিক ড্রোন। এই অত্যাধুনিক ড্রোনগুলিতে প্রায় ১৫ লিটার গঙ্গা জল নিয়ে উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সকল পুণ্যার্থীরা ড্রোনের মাধ্যমে স্নান করতে ইচ্ছুক, তাঁদেরকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানোর পর অত্যাধুনিক ড্রোন দিয়ে স্নান করানো হচ্ছে। সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল জানান, করোনা সংক্রমণ এড়াতে গঙ্গাসাগর মেলার জন্য একাধিক নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতবছর ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল ই-স্নান। তার জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে এই বছর করোনা পরিস্থিতিতে নেওয়া হয়েছে নতুন পদক্ষেপ ড্রোনের মাধ্যমে পুণ্যার্থীদের স্নান করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ বছরেই ড্রোনের মাধ্যমে পুণ্যস্নান ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। কয়েকজন পুণ্যার্থী জানিয়েছেন, ”এ যেন মা গঙ্গা আকাশ থেকে আমাদের পৃথিবীতে নেমে আসছে। যেমনভাবে মহাদেবের জটা থেকে মর্ত্যে আগমন হয়েছিল মা গঙ্গার।”
এদিকে গঙ্গাসাগরে যাতায়াত ব্যবস্থার দিকেও বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে। এক টিকিটেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে তীর্থস্থানে। শুধু যাওয়া নয়, ফেরাও। করোনা পরিস্থিতিতে ভিড় এড়াতে সাগরে যাওয়ার এক টিকিট ব্যবস্থায় খুশি পুণ্যার্থীরা। অতীতে গঙ্গাসাগর যেতে পুণ্যার্থীদের বাসে, ভেসেলে আবার বাসে ওঠার জন্য আলাদা আলাদা করে টিকিট কাটতে হতো। কিন্তু এবারই প্রথম বারবার বাস বা ভেসেলের আলাদা করে টিকিট কাটতে যাত্রীদের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। হাওড়া থেকে ২১০ টাকা, আর বাবুঘাট থেকে ২০০ টাকা দিয়ে একবার টিকিট কাটলেই ঘুরে আসা যাচ্ছে গঙ্গাসাগর।
পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন, বাবুঘাট বা হাওড়া থেকে প্রথমে লট এইট, সেখান থেকে ভেসেলে করে কচুবেড়িয়া সেখান থেকে আবার বাসে করে গঙ্গাসাগর। তবে শেষবার যাত্রীকে যেতে হচ্ছে বেসরকারি বাসে চড়ে। যার খরচটা তাঁদের আলাদা করেই বহন করতে হচ্ছে। আবার একই কায়দায় ফেরাও। আর নতুন করে কোন টিকিট কাটার দরকার হবে না পুণ্যার্থীদের। যাওয়ার টিকিট দেখিয়েই বাস এবং ভেসেলে চড়ে কলকাতায় ফিরে আসতে পারবেন তাঁরা। টিকিট কাটার সময় যাত্রীদের ডাবল ডোজ ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট দেখা হচ্ছে। ভ্যাকসিন দেওয়া না থাকলে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না বলেই জানানো হয়েছে পরিবহন দপ্তরের তরফে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.