দেবব্রত মণ্ডল, গঙ্গাসাগর: সন্ধের পর গঙ্গাসাগর৷ মেলার আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা৷ মাথার উপরে এলইডির চাঁদোয়া৷ চারদিকে কঠোর নিরাপত্তা৷ জমে উঠেছে সাগর মেলা৷ লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যে পুণ্যস্নান সেরেছেন৷ তল্পিতল্পা বেঁধে রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে৷ কেউ আবার সবে আসতে শুরু করেছেন৷ আখড়ায় মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করছেন নাগা সন্নাসীরা৷ মুখে মুখে ফিরছে, ‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার’৷
বৃহস্পতিবার সাগরে আসার পথে বোঝা গিয়েছিল ভিড় হতে পারে৷ চলতি বছরে কুম্ভ বা মহাকুম্ভের মতো কোনও বড় মেলা নেই৷ বাস, লঞ্চ, ভেসেল ও ট্রেন ভর্তি হয়ে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী এখন শুধুই সাগরমুখী৷ লট নম্বর আট, কচুবেড়িয়া, চেমাগুড়ি, সর্বত্র এক ছবি৷ মেলা প্রাঙ্গণে উপচে পড়া ভিড়৷ সাগর থেকে কপিলমুনির মন্দির পর্যন্ত প্রত্যেকটি ড্রপ গেটে জমায়েত৷ জেলাশাসক পিবি সেলিম-সহ স্থানীয় বিধায়ক মেলা পরিষ্কার করতে নিজেরাই ঝাড়ু নিয়ে মাঠে নামলেন৷ মেলা প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন রাখতে এই উদ্যোগ৷ পরে জেলাশাসক জানালেন, “প্রচুর পুণ্যার্থী পুজো দিয়ে ফিরে গিয়েছেন৷ বহু মানুষ এখনও রাস্তায় আছেন৷ কুম্ভ ও মহাকুম্ভের মতো মেলা এবার না থাকায় গঙ্গাসাগরে আরও বেশি মানুষ আসছেন৷”
যত বড় ভিআইপিই হোন না কেন, মন্দির থেকে অন্তত পাঁচশো মিটার দূরে গাড়ি থেকে নামতে হবে৷ গঙ্গাসাগরের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন৷ এবারের মেলায় ভিড়ের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন৷ ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী আগত পুণ্যার্থীদের সমস্ত সুযোগসুবিধা খতিয়ে দেখেছেন৷ তিনি সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ মেলায় ঢুকতে হলে দূরে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে আসতে হবে৷ অ্যাম্বুল্যান্স যাওয়ার জন্য আলাদা লেন তৈরি করা হয়েছে৷ সিদ্ধান্ত হয়েছে, যত বড় ভিআইপিই হোন না কেন, তাঁদের পায়ে হেঁটেই মন্দির চত্বরে আসতে হবে৷ চেমাগুড়ি ও হারউড পয়েণ্ট থেকে যাঁরা মেলায় যাবেন তাঁদের জল ভাঙতে হয়৷ এইসব জায়গায় যাতে কোনও বিপদ না ঘটে তারজন্য পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের থাকতে বলা হয়েছে৷ আইএস, আইপিএসরাও থাকবেন৷ বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও ডুবুরিরা তৈরি৷ অন্য বছরগুলিতে শৌচাগার নিয়ে সামান্য সমস্যার কথা শোনা যায়৷ তা এড়াতে এবার ১০ হাজার অতিরিক্ত অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি হয়েছে৷ বিভিন্ন ভাষায় লিফলেট বিলি হচ্ছে৷ করণীয় এবং করণীয় নয় এমন নির্দেশিকা সম্বলিত লিফলেট বিলি করছে প্রশাসন৷
শুক্রবার সকাল থেকে উত্তুরে হাওয়া টের পাওয়া গিয়েছে৷ মকর সংক্রান্তিতে জাঁকিয়ে শীত পড়বে, এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর৷ মকর সংক্রান্তির আগের দিনই ফের পুরনো ফর্মে শীত। এক ধাক্কায় তাপমাত্রা কমল প্রায় ৩ ডিগ্রি। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.১ ডিগ্রি। আজ তা আরও কমে দাঁড়াল ১৩.৫ ডিগ্রিতে। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, কাল অর্থাত্ মকর সংক্রান্তির দিন তাপমাত্রা আরও কমবে। ফলে শীতের আমেজ গায়ে মেখে সাগরসঙ্গমে হাজির লক্ষাধিক পুণ্যার্থী৷ মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে শনি ও রবিবার দেশ-বিদেশের কয়েক লক্ষ মানুষ সাগরে ডুব দেবেন৷ নির্বিঘ্নে সংক্রান্তিপর্ব শেষ করতে প্রশাসনও একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে৷ সাগরকে নির্মল রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন৷ ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী একটি টিম তৈরি করে দিয়েছেন৷ রয়েছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী৷ সাধারণ মানুষ যাতে উৎসবে আনন্দে কাটাতে পারেন তার দেখভাল করছেন মন্ত্রী, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার৷ নিরাপত্তার জন্য গোটা এলাকা সিসিটিভিতে মুড়ে ফেলা হয়েছে৷ হেলিকপ্টারেও নজরদারি চলবে৷ সাদা পোশাকের পুলিশ এবং মহিলা নিরাপত্তাকর্মী অন্যবারের তুলনায় এবার বেশি থাকছে৷ কণ্ট্রোলরুমে থাকছেন আইপিএস পদমর্যাদার অফিসাররা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.