দীপঙ্কর মণ্ডল, বাঁকুড়া: ‘‘সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা আমাদের ভুল হয়েছিল।’’ সংবাদ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি করলেন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ১৯৭৫-এ সমগ্র দেশে যখন জরুরি অবস্থা জারি হয়, তখন এরাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক৷ এবং কোন সংবাদপত্রে, কী খবর প্রকাশিত হবে, প্রত্যেকদিন সেই অনুমতি দিতেন তিনি৷
[ আরও পড়ুন: ফণী আতঙ্কের মাঝেই জামুরিয়ায় ত্রাস টর্নেডো, স্বচক্ষে ঘূর্ণাবর্ত দেখলেন এলাকাবাসী ]
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করার পর জোরকদমে প্রচার শুরু করেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রী৷ এদিনও শালতোড়া বিধানসভার অন্তর্গত বিহারীনাথ পাহাড় সংলগ্ন তফসিলি সংরক্ষিত একটি গ্রামে প্রচার সারেন তিনি৷ হাতিয়ার করেন রাজ্যের উন্নয়নকে৷ তিনি জানান, ‘‘মন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছে, তার জেরেই মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেবে৷ আমি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভোট পাব৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের কাজই আমাকে জয়ী করার পক্ষে যথেষ্ট৷ এখানে পানীয় জল দিয়েছি, প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার রাস্তা করেছি৷ বাড়ি বাড়ি শৌচালয় তৈরি হয়েছে৷ বাঁকুড়াকে নির্মল জেলা ঘোষণা করা হয়েছে৷ এই জেলায় একশো দিনের কাজ হয়েছে৷ একসঙ্গে পঞ্চায়েত ও সেচ দপ্তরের তেরোটা প্রজেক্টের কাজ চলছে৷ আমি এখানে ভোট চাইলেই পাব৷ আমি বাঁকুড়ার মানুষকে এবং বাঁকুড়াকে ভালবাসি৷ সেজন্যই নিজের থেকে বাঁকুড়াকে আসন হিসাবে বেছে নিয়েছি৷’’
[আরও পড়ুন: সামান্য অসুস্থদের জন্য সরকারি হাসপাতালে চালু অবজার্ভেশন রুম ]
মুনমুন সেনের বদলে ‘লাল মাটি’র মানুষের মন জয় করতে এবার সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার উপরই ভরসা রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নেত্রীর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়েই প্রচার করছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তবে কোনও রাখঢাক না করেই তিনি জানান, ‘‘মেয়রের কাজটাই আমার সবচেয়ে পছন্দের ছিল৷ আমার সময়ে অনেক কাজ হয়েছে কলকাতা কর্পোরেশনে৷ জল পরিষেবা ঠিক হয়েছে, শহরের সৌন্দর্যায়ন হয়েছে, ট্যাক্স কালেকশন সিস্টেম চালু হয়েছে৷ কর্মীদের কাজে ফাঁকি দেওয়া কমেছে৷ হকারদের পুনর্বাসন ও নিয়ন্ত্রণেরও কাজ করেছে কর্পোরেশন৷’’ তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘ইন্দিরা গান্ধী ও প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সংস্পর্শ এখনও মিস করি৷ এরাই আমার আদর্শ৷’’
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেই বাঁকুড়া-সহ জঙ্গলমহলে তাঁদের ছাপ রেখেছে পদ্ম শিবির৷ রাম নবমীর মতো অনুষ্ঠানে চোখে পড়ে আরএসএস, বজরং দলের মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি উপস্থিতি৷ একথা বিলক্ষণ জানেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও৷ তবে প্রতিপক্ষকে ভয় করছেন না তিনি৷ কটাক্ষের সুরে জানান, ‘‘আমরা রাম নবমী পালনের পক্ষে৷ কিন্তু রাম নবমীকে রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে৷ জাতপাতের রাজনীতি করার বিরুদ্ধে৷ আমরা রাম-রহিম দুজনেরই পক্ষে৷ আমরা মন্দির করি কিন্তু মসজিদ ভাঙার কথা বলি না৷’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.