কৃষ্ণকুমার দাস: এবার থেকে ঘর সম্পূর্ণ হওয়ার পর রাজ্য সরকারের ‘বোর্ড, ছবি, লোগো’ লাগানোর পরই বরাদ্দ সম্পূর্ণ টাকা পাবেন ‘বাংলার বাড়ি’ প্রাপকরা। স্টেনসিলের ওই বোর্ড লাগিয়ে সম্পূর্ণ হওয়া বাড়ির সমস্ত দিকের ও ভিতরের সমস্ত ঘরের ছবি অনলাইনে পুর দপ্তরে পাঠাতে হবে। তারপর নথি হাতে নিয়ে সরেজমিনে তদন্তে যাবেন দপ্তরের অফিসাররা। ‘পজেটিভ’ রিপোর্ট হলে তবেই শেষ কিস্তির ৫৮ হাজার টাকা পাবেন গ্রাহকরা। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়, “সরকারি লোগো ও বোর্ড লাগিয়ে বাড়ি পুরোপুরি তৈরি করার রিপোর্ট এলে তবেই অনলাইনে প্রাপকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে। কারণ, অনেকে বাড়ি সম্পূর্ণ না করেই রাজ্যের পাঠানো শেষ দু’তিন কিস্তির টাকা আত্মসাৎ করছেন। প্রতিবেশীরাও জানতে পারছেন না, বাড়িটি কে দিল, টাকা কোথা থেকে এল। উলটে বাড়ি সম্পূর্ণ না করে নিজেদের দায় এড়াতে কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধেই কাটমানির মিথ্যা অভিযোগ খাড়া করছেন।”
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি জেলা মিটিংয়ে গিয়ে বাংলার বাড়ি নিয়ে দূর্নীর্তির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, “বাংলার বাড়ি পেতে কাউকে কোনও টাকা দিতে হয় না। যে গরিব মানুষ যোগ্য সে বাড়ি পাবেই, অন্যরা পাবে না।” এর আগে বছরে পাঁচ লক্ষ বাংলার বাড়ি তৈরি করা হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। পঞ্চায়েতে দরিদ্রদের জন্য দেওয়া বাড়ি ‘আমার ঠিকানা’তেও একইভাবে বিশ্ববাংলা লোগো ও ছবি দেওয়া বোর্ড লাগাতে হবে।
“অনেকে টাকা নিয়ে বাড়ি তৈরি না করে খরচ করে ফেলেছেন। বেনিফিসিয়ারির অনেকে তাই নিজের দায় ঝেড়ে ফেলতে ‘কাটমানির গল্প’ ফাঁদছেন”
‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে ৫০০ বর্গফুট জমি আছে এমন গরিব মানুষকে মাথায় ছাদ দেওয়া ঘর তৈরিতে রাজ্য সরকার ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা দিচ্ছে। কিন্তু পাঁচটি কিস্তিতে এই টাকা সরাসরি ব্যাংকে দিচ্ছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে ২৫ হাজার টাকা নিজে থেকে জমা দিয়ে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে নির্ধারিত ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় প্রাপককে। এই অ্যাকাউন্টে প্রথমে সরকার ৩৫ হাজার টাকা দেয়। মোট ৬০ হাজার টাকা দিয়েই ৩৫০ বর্গফুটের বাড়ির ভিত তৈরি করে ছবি পাঠাতে হয়। এরপর দুই কিস্তিতে এক লক্ষ করে দুই লক্ষ টাকা ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। প্রথম এক লক্ষে লিন্টন পর্যন্ত ঢালাই, দ্বিতীয় এক লক্ষে ছাদ ঢালাই এবং চতুর্থ কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছে পুর দপ্তর। শেষ টাকা দিয়ে প্লাস্টার ও স্যানিটেশন গড়তে হবে। পুর দপ্তরের ব্যাখ্যা, অবশিষ্ট ৫৮ হাজার পাওয়ার আগে ঘরে বিদ্যুৎদয়ন ও অন্যান্য কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া সরকারি স্টেনসিল বোর্ড বাড়ির সামনে লাগানো বাধ্যতামূলক। বিশ্ববাংলার লোগো দেওয়া ওই বোর্ড ও সম্পূর্ণ বাড়ির ছবি না পাঠালে শেষকিস্তির টাকা বেনিফিসিয়ারি পাবেন না।
পুরমন্ত্রী এদিনও ফের বলেন, সরকারি নীতি মেনে যে ২৫ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয় বাংলার বাড়ি প্রাপকদের। কাউন্সিলর বা পুরসভা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে ২৫ হাজার টাকা দিতে বলেছেন প্রাপককে। এই টাকাকে কাটমানি ভেবেছেন। আবার অনেকে টাকা নিয়ে বাড়ি তৈরি না করে খরচ করে ফেলেছেন। বেনিফিসিয়ারির অনেকে তাই নিজের দায় ঝেড়ে ফেলতে ‘কাটমানির গল্প’ ফাঁদছেন বলে পুরমন্ত্রী অভিযোগ করেন।
যাঁরা পরিবারের সদস্য বেশি হওয়ায় ‘বাংলার বাড়ি’কে নিজের অর্থে বাড়িয়ে নিতে চান তাঁদের জন্যও রাজ্য সরকার আরেক দফা সুবিধা দিচ্ছে। পুর দপ্তর বলছে, বাড়তি জমিতে চাইলে ৩৫০ বর্গফুটের পরিবর্তে দ্বিগুন মাপের বাড়ি বানাতে পারবেন প্রাপকরা। কিন্তু সরকারি মাপের বাইরে যতটুকু তৈরি করবেন সেটার খরচ তাঁকেই বহন করতে হবে। আর ‘বাংলার বাড়ি’র বাইরে যতটুকু তৈরি হবে তার প্ল্যান আগেই পুরসভা থেকে অনুমোদন করাতে হবে। অনুমোদিত প্ল্যান না থাকলে বাংলার বাড়ি’র টাকাও পাওয়া যাবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.