ছবি: রঞ্জন মাইতি
সৈকত মাইতি, তমলুক: সহযোদ্ধাদের অনেকেই আর নেই। তবুও বিদ্রোহী নগরীতে আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল তমলুকের স্বাধীনতা সংগ্রামী সূর্যকুমার আদক। ৯৩ বছর বয়সেও স্বাধীন দেশের রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ কমেনি তাঁর।
[ পড়েছিল ক্ষুদিরামের পদধূলি, দেউলগ্রামে বিপ্লবীর মূর্তি স্থাপনের দাবি গ্রামবাসীর]
পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক বরাবরই বিপ্লবীদের আঁতুড়ঘর হিসাবে পরিচিত। পরাধীন ভারতে ইংরেজ সরকারের লাগাম ছাড়া অত্যাচারে ঘরছাড়া হতে হয়েছিল অনেকেই। গভীর জঙ্গলে মাচা বেঁধে থাকতেন তাঁরা। এই তমুলকে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিপ্লবীরা। অল্প বয়েসেই বিপ্লবীদের দলে নাম লিখিয়েছিলেন আজকের অশীতিপর সূর্যকুমার আদক। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তমলুক থানা ও আদালত দখল করতে অভিযান চালিয়েছিলেন বিপ্লবীরা। শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরার অন্যতম সহযোগী ছিলেন সূর্যকুমার। পুলিশের গুলি খেয়েও কোনওমতে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় একমাস ভরতি ছিলেন তমলুক জেলা হাসপাতালে। একটু সুস্থ হতে না হতেই ঠাঁই হয় তমলুক জেলে। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিপ্লবী সূর্যকুমার আদককে নিয়ে যাওয়া হয় মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে। একমাস কারাবাসের পর মুক্তি পান তিনি। কিন্তু, বিপ্লবী দলে নাম লেখানোয় ম্যাট্রিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি। সংসার চালাতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু করেন সূর্যবাবু। গোপন চলতে থাকে বিপ্লবী কার্যকলাপও। কালক্রমে অজয় মুখোপাধ্যায়, সুশীল ধাড়ার মতো বরেণ্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংস্পর্শে আসেন। মহিষাদলে স্বয়ং মহাত্মা গান্ধীর বক্তৃতাও শুনেছেন অশীতিপর এই স্বাধীনতা সংগ্রামী।
তবে সূর্যকুমার আদক একা নন, পূর্ব মেদিনীপুরে তমলুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন অনেক বিপ্লবীর উপাখ্যান। তমুলকের বিদ্রোহী নগরীরই বাসিন্দা ছিলেন নরেন জানা, মহেন্দ্র আদক, ভূষণ জানা, প্রহ্লাদ প্রামাণিকের মতো আরও অনেকেই। সেই সূত্রেই এই এলাকা আজও বিদ্রোহী নগরী হিসাবে পরিচিত। কিন্তু সে সব আজ ইতিহাস। যাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে স্বাধীন করার লড়াই লড়েছিলেন, তাঁদের প্রায় কেউই আর বেঁচে নেই। এখন শুধু স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান অশীতিপর সূর্যকুমার আদক। তাঁর কাছে কেউ আসেও না। তবে বয়সের ভারে শরীর অশক্ত। কিন্তু স্মৃতিশক্তি এখনও প্রবল সূর্যকুমারের। ঝরঝরে ইংরেজি বাংলায় অনর্গল বলে গেলেন অগ্নিযুগের ইতিহাস। জানালেন, ‘সেকালে এতটুকু বাকস্বাধীনতা ছিল না। এখন তো আমরা অনেক ভাল আছি।’
[ স্বাধীনতা আন্দোলনে শহিদ একই গ্রামের ১৪ জন, তবুও নেই কোনও স্মৃতিফলক]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.