নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: জাল নিয়োগপত্র বা জাল নোটের কথা তো হামেশাই শোনা যায়। নকল শংসাপত্র বা বড় ম্যাচের জাল টিকিট, এমনকী নকল ট্রেনের টিকিটও খুব একটা অচেনা নয়। কিন্তু নকল আমন্ত্রণ পত্র? তাও আবার মৃতের স্মৃতিতে আয়োজিত নিয়মভঙ্গের অনুষ্ঠানের! সেটাও দেখতে হল!
চাঞ্চল্যকর এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট। যে ঘটনার শিকার আবার যে কেউ নন, খোদ বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস। ঘটনার সূত্রপাত সপ্তাহখানেক আগে। সম্প্রতি বসিরহাট দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের মা লীলা বিশ্বাস প্রয়াত হন। শাস্ত্র মেনে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম শেষে আগামী ১৫ নভেম্বর নিয়মভঙ্গের আয়োজন করেছেন সদ্য মাতৃহারা দীপেন্দু। বসিরহাটের বিদ্যুৎ সংঘের মাঠে হাজার তিনেক অতিথির খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় ওই দিন। সে মতো আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে বিলি করাও শুরু হয়েছিল ক’দিন ধরে। বসিরহাট পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে ১০টি করে নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল এলাকার বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণের জন্য। সেই কাজে নেমেই নজরে আসে জাল আমন্ত্রণপত্রের বিষয়টি।
দীপেন্দুর কথায়, ‘‘কয়েকদিন আগে শহরের ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মারফত জানতে পারি, নিয়মভঙ্গের অনুষ্ঠানের কার্ড জাল করে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ এবং বসিরহাটের একাংশের মানুষকে নিমন্ত্রণ করা হচ্ছে। যে বা যারা এই কাজ করছে, তারা ই-মেলের মাধ্যমে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে ঢালাও নিমন্ত্রণ করা শুরু করেছে। হোয়াটসঅ্যাপেও ১৫ থেকে ২০ জনকে নিয়মভঙ্গের দিন আমার বাড়িতে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। পাশাপাশি নিমন্ত্রণের জাল কার্ড ছাপিয়েও অনেককে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ১৫ তারিখ বিদ্যুৎ সংঘের মাঠে আসতে অনুরোধ করেছে।’’ বিধায়ক জানাচ্ছেন, খোঁজখবর করে পাশের ট্যাঁটরা গ্রামের বাসিন্দা চক্রান্তের ‘মাথা’ উজ্জ্বল বিশ্বাসের হদিশ মেলে। তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
কেন এমন করা হল? দীপেন্দুবাবুর বক্তব্য, তাঁর মায়ের কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে না হয় এবং নিমন্ত্রিত অতিথিরা যাতে খেতে না পেয়ে ফিরে যান, সেটাই ছিল ধৃতের উদ্দেশ্য। তাতে অনুষ্ঠানে প্রবল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। সামাজিক হেনস্তার পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ক্ষতি হবে বিস্তর। ‘‘আমার মৃত মায়ের অনুষ্ঠানে কেউ যে এমন কাজ করতে পারে, তা ভাবনার বাইরে ছিল।’’ বলছেন দীপেন্দু। একই বক্তব্য পুলিশেরও। তাদের কথায়, বাড়তি নিমন্ত্রিত অতিথি যাতে খেতে না পেয়ে ফিরে যান, ভারপ্রাপ্ত ক্যাটারিং সংস্থা এবং দীপেন্দুবাবুর বদনাম হয়- সেই উদ্দেশ্যেই নিমন্ত্রণের কার্ড জাল করে বিলি করছিল ধৃত উজ্জ্বল। যাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের ব্যাখ্যা, সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত লোক ঢুকিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে বিধায়ককে এলাকায় অপদস্থ করার জন্যই এই চক্রান্ত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.