ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: এ বোধহয় আরেক বিরিঞ্চিবাবা৷ সাধু সেজে মানুষের সমস্যা সমাধানের অছিলায় ঘরে ঢুকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পুরনো ফর্মুলা৷ তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পুরনো নোট বাতিল নিয়ে মানুষের টেনশন৷ তার ফাঁকেই ঘোলা জলে মাছ ধরে টাকা হাতিয়ে পালানোর ধান্দা করেছিলেন এই বাবাজি৷ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এসে পুলিশের জালে নতুন বিরিঞ্চি৷
ভারতে নোট বাতিলের খবর পেয়েই যেন পরশুরামের বইয়ের পাতা থেকে উঠে সটান আগমন ভক্তদের ‘কল্যাণ সাধনে’৷ এই বাংলাদেশি বিরিঞ্চিবাবার কাছে আছে সব বিপদের সমাধান৷ টাকা দিলেই হাতেগরম বিপন্মুক্তি৷ তবে এক-আধ টাকা নয়, নিদেন পক্ষে পাঁচ হাজার৷ আর ভক্তদের কল্যাণ করতে বাতিল হওয়া পাঁচশো-হাজারের নোট নিতেও আপত্তি নেই তাঁর৷
নোট বাতিলের খবরে যে সব গুজব তৈরি হয়েছে তারই সুযোগ নিতে সরাসরি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া থেকে উত্তর ২৪ পরগনায় চলে এসেছে এই ভন্ড বাবাজি৷ গল্পের বিরিঞ্চি পালিয়ে পার পেলেও, শেষ রক্ষা হয়নি এই বাংলাদেশির৷ রবিবার এই জোচ্চোরকে গ্রেফতার করেছে দেগঙ্গা থানার পুলিশ৷ জানা গিয়েছে, এই প্রতারকের নাম, মির মহম্মদ মিলটন (৩০), বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর অঞ্চলে৷ গত দশ নভেম্বর বৈধ পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকে বারাসতের একটি হোটেলে ওঠে সে৷ এর পর শুরু হয় ‘অপারেশন’৷ গ্রেফতারির পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মিলটন জানায়, আট নভেম্বর নোট বাতিল হওয়ার খবর দেখে টাকা হাতানোর ছক কষে সে৷ অনেকের ঘরেই বাতিল হওয়া নোট মজুত থাকবে৷ অকেজো ভেবে লোকে সহজেই তাকে দিয়ে দেবে৷ এই আশাতেই ‘বিরিঞ্চিবাবার’ কায়দায় ফন্দি আঁটে সে৷ কী ছক কষেছিল সে?
পরশুরামের বিরিঞ্চবাবা গল্পে বিগত সময়ে ফিরে গিয়ে কম দামে লোহা কিনে বড়লোক হতে চেয়েছিলেন এক গৃহস্থ৷ মোটা টাকার বিনিময়ে ‘টাইমমেশিনে’ চড়িয়ে ভক্তদের সেই সুযোগ করে দিয়েছিলেন বাবাজি৷ একেবারে সেই কায়দায় গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে বিপদের সঙ্কেত দিয়ে টাকা নিয়ে উদ্ধারের পথ বাতলায় এই বাংলাদেশি যুবক৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দশ নভেম্বর থেকে দেগঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় রেইকি চালায় এই যুবক৷ ওই এলাকায় অধিকাংশ গ্রামবাসী ব্যবসায়ী৷ ফলে ঘরে নগদ টাকাও ছিল৷ পরিকল্পনা মতো শ্বেতপুরে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে নিজেকে ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হিসাবে পরিচয় দেয়৷ একা গৃহবধূকে আসন্ন বিপদের ভয় দেখিয়ে জাল বিছায় ওই ভণ্ড৷ পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বিপদ কাটানোর আশ্বাসও দেয়৷ বিপদের ভয়ে পাঁচশো হাজার মিলিয়ে মোট পাঁচ হাজার টাকা প্রতারকের হাতে তুলে দেন ওই গৃহবধূ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, এই ভাবেই দেগঙ্গা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে মহিলাদের বিপদের ভয় দেখিয়ে বাতিল নোট হাতিয়েছে ওই প্রতারক৷ অবশেষে শ্বেতপুর গ্রামের ওই গৃহবধূর স্বামী বিষয়টি জানতে পারেন৷ এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখে মির মহম্মদ মিলটনকে রবিবার পাকড়াও করেন তিনি৷ তারপর পুলিশে হস্তান্তর৷
মোট কত টাকা হাতিয়েছে এই ‘বিরিঞ্চি’? কেউ জানে না৷ পুলিশও না৷ আরও প্রশ্ন, কোন বাড়িতে কত টাকা, এই তথ্য কে দিল? প্রশ্নের উত্তর জানতে ধৃতকে সোমবার বারাসত আদালতে পেশ করে চার দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ৷ তবে শুধু এই বাংলাদেশি বিরিঞ্চি নয়, নোট বাতিল হওয়ার পর প্রতারণার জাল পেতে বসে আছে অনেক অসাধু ব্যক্তি৷ তাই সতর্ক থাকুন৷ বারবার বলছে পুলিশ৷ না হলে, কষ্টার্জিত অর্থে কখন যে সিঁদ কাটবে ‘বিরিঞ্চিবাবা’-রা, তা টের পাবেন না৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.