সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সিপিআই (মাওবাদী) নিহত শীর্ষ নেতা কিষাণজির মৃত্যুবার্ষিকীর তিনদিন আগেই জঙ্গলমহল ছাড়ল দুই ব্যাটালিয়নের ১৪
কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central Force)। শুক্রবার রাতে বিশেষ ট্রেনে তাঁরা পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে ছত্তিশগড়ের দিকে রওনা দেয়। এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। সামনে বিধানসভা ভোট, পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ড সীমানায় সম্প্রতি বাড়ছে মাওবাদীদের আনাগোনা। এই পরিস্থিতিতে এত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী সরিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনীতি রয়েছে বলেই মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
শুক্রবার পুরুলিয়া স্টেশন থেকে ২১ কোচের বিশেষ ট্রেনে ৫০ নম্বর ব্যাটেলিয়ন ও ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে ১৮টি কোচের বিশেষ ট্রেনে ১৬৫ নম্বর ব্যাটেলিয়ন ছত্তিশগড়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই দুই ব্যাটেলিয়ন পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের যে শিবিরে ছিল, সেখানকার গুরুত্ব বুঝে জঙ্গলমহলে (Jungle Mahal)আগে থেকে মোতায়েন করা ৬৬ ও ১৮৪ নম্বর ব্যাটেলিয়ন দায়িত্ব নেবে। কিন্তু এই ব্যাটেলিয়নের সাত কোম্পানি করে বাহিনী জঙ্গলমহলে নেই। তাছাড়া এই ব্যাটেলিয়নের বাহিনী যে শিবিরগুলিতে ছিল, সেখান থেকে সরে যাওয়ায় ওই শিবিরগুলির দায়িত্ব আপাতত নেবে রাজ্য পুলিশ। ফলে বিধানসভা ভোটের মুখে ঝাড়খন্ড লাগোয়া জঙ্গলমহলের দুই জেলা পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে চাপ বাড়ল রাজ্য পুলিশের।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর রাজ্য সফরের সময় জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার নিয়ে সিআরপিএফ নির্দেশিকা জারি করেছিল। সিআরপিএফের ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেলের আইজি প্রদীপকুমার সিং বলেন, “দুই ব্যাটেলিয়নের সমস্ত কোম্পানি বিশেষ ট্রেনে ছত্তিশগড় যাচ্ছে।” কেন্দ্রের এহেন সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক চাল দেখছেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাতো। তাঁর কথায়, “দুই ব্যাটেলিয়নের ১৪ কোম্পানি বাহিনী তুলে নেওয়ার পেছনে রাজনীতি রয়েছে। বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলকে অশান্ত করতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।” তাছাড়া ফি বছর শহীদ কিষাণজির মৃত্যুবার্ষিকীতে সিপিআই (মাওবাদী) দেশের মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলিতে ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালিত হয়ে থাকে। তার ঠিক আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকা ছাড়ায় খানিকটা উদ্বেগে রাজ্য পুলিশ।
গত ১০ নভেম্বর দুই ব্যাটেলিয়নের অ্যাডভান্স টিম ছত্তিশগড় ঘুরে এসে সেখানকার সিআরপিএফ আইজি-র সঙ্গে বৈঠক করে। জঙ্গলমহল পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বীরভূম মিলিয়ে কোবরা ছাড়া সিআরপিএফের মোট সাত ব্যাটেলিয়ন ছিল। দুই ব্যাটেলিয়ন চলে যাওয়ায় জঙ্গলমহলে রইল বাকি এই পাঁচ ব্যাটেলিয়ন কেন্দ্রীয় বাহিনী। এর মধ্যে ৬৬ ব্যাটেলিয়নের জঙ্গলমহলে রয়েছে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে দু’কোম্পানি করে
চার কোম্পানি। ১৮৪ ব্যাটেলিয়নের সাত কোম্পানির মধ্যে জঙ্গলমহলে আছে মোট ছ কোম্পানি। তার মধ্যে ঝাড়গ্রামে পাঁচ ও পশ্চিম মেদিনীপুরে
একটি করে কোম্পানি রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.