সম্যক খান, মেদিনীপুর: নিজেদের সাধের চুল দান করে ক্যানসার রোগীদের পাশে দাঁড়ালেন চার তরুণী। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই করেছেন চার তরুণী শ্রেয়া মিশ্র, শ্রমণা মাজি, অমৃতা পিরি ও মৌমি মণ্ডল। মেদিনীপুর জেলার ভিন্ন ভিন্ন জায়গার বাসিন্দা ওঁরা। কেউ পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত আবার কেউবা চাকরি করছেন। কিন্তু স্কুল জীবনের ওই বন্ধুরা নিজেদের উদ্যোগে চুল কেটে পাঠিয়ে দিলেন মুম্বইয়ের এক নির্দিষ্ট ঠিকানায়। তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সকলেই।
চার বন্ধুর মধ্যে ময়নার শ্রেয়া ও কেশপুরের শ্রমণা মেদিনীপুর কলেজ থেকে পাশ করার পর বর্তমানে বিএড পাঠরতা। অমৃতা গিরি বর্তমানে মেদিনীপুর কলেজেই এমএ পড়ছেন। আর মৌমি মণ্ডল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নার্সের চাকরি করছেন। কিন্তু চার বন্ধুই যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দুঃস্থের ছায়া’র সঙ্গে। প্রায় মাস ছয়েক আগে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তা ওয়াসিম আহমেদের ফেসবুক ওয়ালে করা একটি পোস্ট দেখে প্রথম অনুপ্রাণিত হন শ্রেয়া ও শ্রমণা। সেই পোস্ট থেকেই তারা জানতে পারেন ক্যানসার রোগীদের সাহায্যার্থে চুল দান করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন রেডিয়েশন আর কেমোথেরাপি নিতে নিতে দুর্বল হয়ে পড়েন ক্যানসার আক্রান্তরা। চামড়া থেকে একে একে উঠে যায় চুল। সবই ছিল তাঁদের জানা। কিন্তু অন্যদের দান করা চুল তাঁদের কোনও কাজে লাগতে পারে সেটা ভাবতেও পারেনি এই চার তরুণী। ফেসবুকের মাধ্যমেই সেটা জানতে পারেন।
শ্রেয়া ও শ্রমণার কথায়, বিষয়টি ফেসবুকে দেখার পর তাঁরা ওয়াসিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর অংশীদার হতে চান। কিন্তু তাঁদের চুল তখন ছিল অনেকটাই ছোট। সেদিন থেকেই তাঁরা চুলের যত্ন নিতে শুরু করেন। দীর্ঘ ছ’মাস চুলের যত্ন নেওয়ার পর চুলের বাড়তি অংশ কেটে তাঁরা কুরিয়রের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন মুম্বইয়ের নির্দিষ্ট ঠিকানায়। শ্রেয়া ও শ্রমণার এই চুলদানের কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন তাঁদের বন্ধু অমৃতা ও মৌমিও। তাঁরাও একই পথ অনুসরণ করেন। তাঁদের কথায়, চুল কাটলে কিছুদিন পর তা ফের গজিয়ে যাবে। কিন্তু যাঁরা ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে কেমোথেরাপির চোটে চুল হারাচ্ছেন, তাঁদের মুখে একচিলতে হাসি ফোটানো অনেক বেশি আনন্দের।
এদিকে ওয়াসিমও জানিয়েছেন, বরাবরই তাঁদের সংগঠন দুঃস্থদের জন্য কাজ করে থাকে। তাদেরই যাত্রাপথের চার সঙ্গীর এধরনের কর্মকাণ্ড তাদের সংগঠনকেও গর্বিত করেছে। তিনি বলেছেন, “প্রথমে বিষয়টি আমিও একজনের ফেসবুক ওয়াল থেকে জানতে পারি। তারপর তাঁর অনুমতি নিয়েই নিজের ওয়ালে তা কপি পোস্ট করি। তা দেখেই এগিয়ে এসেছে মেদিনীপুরের গর্ব ওই চার তরুণী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.