ছবি: প্রতীকী।
রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: সব নদী গিয়ে সমুদ্রে মিশে যায়, বইতে পড়েছিল তারা। আর তা চাক্ষুষ করার ইচ্ছা জাগে চার বাল্যবন্ধুর। তাই নৌকা নিয়ে নদীপথে সমুদ্র দেখতে বেড়িয়ে পড়ে তারা। বৃহস্পতিবার সন্ধের আগেই নিখোজ হয়ে যায় আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের পূর্ব কাঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্গিল মোড় এলাকার চার বন্ধু। হারিয়ে যাওয়া চার বাল্যবন্ধুর প্রত্যেকের বয়স ৯ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। চার নিখোজ এই বন্ধুকে ঘিরে তোলপাড় হয়ে যায় জেলা প্রশাসন। প্রথমে পুলিশ ও তারপর খবর যায় জেলা প্রশাসনে। নদীতে স্পিড বোট, ডুবুরি লাগিয়ে লাগাতার রাত থেকে তল্লাশি শুরু করে প্রশাসন। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর, পুলিশ ও জেলা প্রশাসন এবং গ্রামবাসীরা লাগাতার তল্লাশি চালিয়েও রাত পর্যন্ত তাদের খোঁজ পায়নি। অবশেষে শুক্রবার দুপুর ১২টার পর কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ি বাজার এলাকা থেকে চার বন্ধুকে পাকড়াও করে পুলিশ। স্থানীয় একটি দোকানে খেতে এসে পুলিশের জালে ধরা পড়ে তারা।
ওই চারজনই পূর্ব কাঠালবাড়ির কার্গিল মোড় এলাকার বাসিন্দা। ওই এলাকার পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে খরস্রোতা শিলতোর্সা নদী। নৌকা নিয়ে সমুদ্র দেখতে যাত্রা শুরু করে তারা। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ওই চার বন্ধু বাড়ি না ফিরলে বাড়ির লোকেদের সন্দেহ হয়। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। একসঙ্গে একই গ্রামের চার-চারটি ছেলে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় হুলুস্থুল পড়ে যায়। জানা যায় শিলতোর্সা নদীর সঞ্জয় ঘাট এলাকা থেকে একটি নৌকাও পাওয়া যাচ্ছে না। যে লোহার রডে ওই নৌকা বাঁধা ছিল সেখানে ছোট ছেলেমেয়েদের পায়ের ছাপও দেখতে পান স্থানীয়রা। আর তখনই সকলে নিশ্চিত হন নৌকা নিয়েই চার বন্ধু একসঙ্গে নদীপথে কোথাও গিয়েছে।
স্থানীয় যুবক প্রসেনজিৎ বর্মন বলেন, “নৌকা হারিয়ে যাওয়ার পর সঞ্জয় ঘাটে গিয়ে দেখা যায় নোঙরের কাছে ছোট ছেলেদের পায়ের ছাপ। তখনই আমরা বুঝতে পারি নৌকা নিয়েই এরা কোথাও গিয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরকে খবর দেওয়া হয়।” সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মিংমা শেরপা বলেন, “কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ি বাজার এলাকা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টার পর ওদের উদ্ধার করা হয়েছে। চারজনই সুস্থ। পুলিশ তাদের চা-বিস্কুট খাইয়েছে। এরা একটা ত্রিপল, কয়েকটি বস্তা ও একটি দা নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল। রাতে বৃষ্টিতে নৌকা নদীর কিনারে দাঁড় করিয়ে ত্রিপলে ঢেকেছিল। খিদে পাওয়ায় পুণ্ডিবাড়ি বাজারে কিছু খেতে গেলেই পুলিশের নজরে পড়ে যায়। ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই আমরা সংলগ্ন সব জেলা ও থানায় এই চার বন্ধুর ছবি পাঠাই। চারজনকেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।”
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন তাদের পরিবারের লোকজন। নিখোঁজ এক নাবালকের দাদু সুখেন বর্মন বলেন, “চারজন সমুদ্র দেখতে এভাবে নদীপথ ধরে বেড়িয়ে যাবে কে জানে? তবে ভাগ্যিস ওদের খুজে পাওয়া গিয়েছে। রাতভর বৃষ্টি থাকায় নৌকা চালাতে পারেনি ওরা। তাই নদীর পাশে নৌকা নোঙর করে রাত কাটিয়েছে। না হলে ভরা তোর্সায় চলে গেলে কী যে হত কেউ জানে না। গ্রামবাসী, পুলিশ ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। ওরা সারারাত খোঁজাখুঁজি করেছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.