ছবি: প্রতীকী
অর্ণব দাস, বারাকপুর: গেঞ্জি কারখানায় আগুন লাগার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন চার শ্রমিক। শুক্রবার সারাদিন ধরে সেই চারজনের আত্মীয়-পরিজনের বিলাপে ভারী হয়ে উঠেছিল দগ্ধ কারখানার আকাশ-বাতাস। কিন্তু হাজার চেষ্টাতেও খোঁজ মেলেনি তাঁদের। ঠিক হয় শনিবার ড্রোন উড়িয়ে খোঁজ করা হবে তাঁদের। এদিন সকালে অবশেষে হদিশ মিলল চার শ্রমিকের। কিন্তু সম্পূর্ণ ঝলসে যাওয়া অবস্থায়। কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে কাজ করতে এসে আর বাড়ি ফেরা হচ্ছে না তাঁদের।
প্রায় ৩৮ ঘণ্টা টানা লড়াইয়ের পর নিয়ন্ত্রণে আসে নিউ বারাকপুরের (New Barrackpore) বিলকান্দা এক নম্বর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত তালবান্দা শিল্প তালুকের গেঞ্জি কারখানার আগুন। তবে আড়াই দিন কেটে গেলেও কারখানার ভিতরে এখনও ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে বলেই খবর। সেই আগুন নেভানোর জন্য ঘটনাস্থলে রয়েছে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন। তারই মধ্যে অগ্নিদগ্ধ কারখানার দোতলায় চারটি মৃতদেহ একসঙ্গে দেখতে পান দমকলকর্মীরা। এরপরই খবর দেওয়া হয় তাঁদের পরিবারকে। মৃতদেহ শনাক্তকরণের পর তাঁদের ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। তারপর দেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে।
করোনার জেরে সরকারি বিধিনিষেধ জারি থাকায় প্রথমে বন্ধই ছিল কারখানাটি। এরপর গত সোমবার কারখানার কাজে যোগ দেন গাঁদামারা মাসুন্দিয়ার বাসিন্দা বছর বত্রিশের তন্ময় ঘোষ। সদ্য কেনা বাইকে পৌঁছেছিলেন কর্মক্ষেত্রে। বুধবার রাতে কথা হয়েছিল স্ত্রীর সঙ্গে। রয়েছে চার বছরের ছোট মেয়ে। কিন্তু পরের দিনই বদলে যায় ছবিটা। আগুন লাগার খবর পাওয়ার পরই ছুটে আসেন পরিবারের সদস্য। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না চাকদহের কুন্দলিয়া গ্রামের সুব্রত ঘোষেরও। ছেলের অপেক্ষায় কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদেছেন বাবা। কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের কথা শুনে আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছিলেন অশোকনগরের শ্রমিক স্বরূপ ঘোষ ও হরিণঘাটার বাসিন্দা অমিত সেনের বাড়ির লোকেরাও। কখন খোঁজ মিলবে, তারই প্রহর গুনছিলেন। মনের কোণে প্রশ্ন জেগেছিল, ঘরের ছেলেকে জীবিত অবস্থাতেই ফিরে পাবেন তো? কিন্তু কারখানা থেকে উদ্ধার হল ঝলসানো চার দেহ। একবুক কান্না নিয়ে জ্বলে যাওয়া দেহ চিহ্নিতকরণই এখন কাজ পরিবারের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.