রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: বাড়তি রোজগারের আশায় উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানেই চিরসমাধি হল নদিয়া জেলার বাসিন্দা চার বাঙালি যুবকের। তাঁদের মধ্যে তিনজন তেহট্টের এবং একজন চাপড়ার বাসিন্দা। সোমবার মিজোরামের এক খাদানে ধস নেমে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে সেখানকার প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
মৃতেরা হলেন তেহট্টের রাকেশ বিশ্বাস, মিন্টু মণ্ডল ও বুদ্ধদেব মণ্ডল। তিনজনেরই বাড়ি তেহট্ট কালীতলা পাড়ায় হাসপাতালের আশপাশে। চতুর্থজন চাপড়া পিঁপরেগাছির বাসিন্দা মদন দাস। আরও এক বাঙালি শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। এনিয়ে শোকপ্রকাশ করে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘‘মিজোরামে পাথরখাদানে ধস (Mizoram Stone Quarry Collapse) নেমে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ শ্রমিক-সহ মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমরা পাঁচ শ্রমিকের দেহ আনার ব্যাপারে মিজোরাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। মৃতদের পরিবারকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা।’’
Deeply anguished by the stone quarry collapse in Mizoram that has resulted in the death of 12 workers, including 5 from WB.
We’re in touch with the Govt of Mizoram to bring back the bodies & have assured the families of support.
My condolences to those who lost their loved ones
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) November 15, 2022
এক বেসরকারি সংস্থার পাথর খাদানে শ্রমিকের চাকরি নিয়ে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার চারজন মিজোরাম রওনা হয়েছিলেন। সোমবার দুপুরে মিজোরামের হেশথিয়াল জেলার মৌদড় গ্রামের ওই পাথর খাদানে নেমে কাজ করার সময় বিপর্যয় ধেয়ে আসে। বিপুল ধস নেমে খাদানের অন্দরে আটকে পড়েন শ্রমিকেরা। হেশথেলিয়া জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সোমবার বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ খাদানে ধস নামে। বারো জন শ্রমিক চাপা পড়েন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন নদিয়ার ওই চার যুবক।
মর্মান্তিক সংবাদটি মঙ্গলবার তাঁদের বাড়িতে এসে পৌঁছতেই চার পরিবারে কান্নার রোল। মিন্টু ছিলেন বাড়ির একমাত্র ছেলে। রাকেশ তিন ভাইবোনের সবার বড়। আর চার ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠতম বুদ্ধদেব। তিন বাড়িতেই পড়শি, পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের ঢল। কিন্তু স্বজনহারাদের সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা কারও মুখে জোগায়নি। সবারই একই প্রতিক্রিয়া, ‘‘দুটো টাকা রোজগার করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণগুলোই চলে গেল! এ তো ভাবা যায় না!’’ বুদ্ধদেবের বাবা সুনীলকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘সোমবার দুপুরেই ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হল, খাওয়াদাওয়া নিয়ে গল্প করলাম। ডিউটির সময় হয়েছে বলে ফোন রেখে দিল। তখন কি জানতাম, এটাই ওর সঙ্গে শেষ কথা!’’ চাপড়ার পিঁপরেগাছিতে মদন দাসের বাড়িতেও এক দৃশ্য। আপাতত ওঁরা সন্তানদের নিথর দেহ ফেরার অপেক্ষায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.