নিজস্ব সংবাদদাতা, তেহট্ট: এই গ্রামে মা দুর্গার চেয়ে কন্যা সরস্বতীর কদর বেশি। তাই দুর্গাপুজো বাঙালির বড় উৎসব হলেও নদিয়ার তেহট্ট থানার নিশ্চিন্তপুরের বাসিন্দাদের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব সরস্বতী পুজো। কর্মসুত্রে যারা গ্রামের বাইরে থাকেন, পুজা উপলক্ষে তারাও গ্রামে ফিরে আসেন। শুরু হয় বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের আনাগোনা। সরস্বতী পুজা দেখতে আশেপাশের গ্রাম, এমনকী পাশের জেলাগুলি থেকেও মানুষ আসে এই পুজো দেখতে।
কয়েক মাস আগে থেকে উদ্যোক্তাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় ছোট-বড় মিলিয়ে তেহট্টের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে প্রায় ৪০টিরও বেশি পুজো মণ্ডপ লক্ষ্য করা যায়। একমাস আগে থেকেই শুরু হয় উন্মাদনা। তেহট্টের আরশিগঞ্জ হয়ে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ঢুকতেই আলোকসজ্জা চোখে পড়ে। প্রথমেই প্যারাডাইস ইউনাইটেড পুজো। এবছর এখানকার থিম আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জারোয়া উপজাতিদের জীবনযাপন। প্যারাডাইস ইউনাইটেড পুজো কমিটির সম্পাদক বলেন, “সাধারণ মানুষ যেভাবে জীবনযাপন করে সে জায়গায় দাঁড়িয়ে আন্দামানের উপজাতিরা এখনও আধুনিক হতে পারেনি। তাদের জীবনযাপন কেমন তা আমাদের এলাকার সাধারণ মানুষকে জানানোর জন্যই আমাদের এবারের থিম জারোয়া উপজাতিদের দ্বীপ।”
নিশ্চিন্তপুর বাবু পাড়ার থিম পাখির দেশ। বাবুপাড়ার সরস্বতী পুজোতে প্রত্যেক বছর থিমে থাকে চমক। এই পুজো কমিটির সম্পাদক সৌমজিৎ বিশ্বাস বলেন, “পাখিদের খাঁচায় নয়, মুক্ত আকাশে উড়ছে দেখতেই বেশি ভাল লাগে। পাখিদের স্বাধীনভাবে ঘুরতে দেওয়া আমাদের উচিত। সেই কারণেই আমাদের এবারের থিম পাখির দেশ।” তিনি আরও বলেন, “পরিবেশ সচেতনতা মাথায় রেখে আমরা আমাদের এই থিমে কোন ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করছি না। সমস্ত কিছুই কাগজ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।”
২৬তম নিশ্চিন্তপুর দক্ষিণপাড়ার কিরণ সংঘের এবারের থিম সাত পাকে বাঁধা। গ্রামের এই পুজো দেখতে দর্শনার্থীদের লাইন পড়ে যায়। পুজো কমিটির দাবি, এবারের মণ্ডপে আগের তুলনায় মানুষের লাইন বেশি পড়বে। কিরণ সংঘ পুজো কমিটির এক সদস্য সঞ্জীব বিশ্বাস বলেন, “বিয়ের পিঁড়িতে বড় কন্যার বিবাহ উপলক্ষে যে ধরনের সাজসজ্জা করা হয় সেই রকমই আমাদের থিমে আকর্ষণীয় বেশ কিছু সাজসজ্জা রাখা হয়েছে। এই থিমে ব্যবহার করা হয়েছে ছেলে ও মেয়ের টোপর, বিয়ের কুলো এবং ঝিনুক।”
নতুনপাড়া সংঘের (হুইস্কি ক্লাব) এবারের থিম শৈলশহর দার্জিলিং। পুজো কমিটির সম্পাদক মিলন বিশ্বাস বলেন, “দার্জিলিঙে যেভাবে ট্রয় ট্রেন চলে, রোপওয়ে দেখা যায় আমাদের টিমের মাধ্যমে তা দেখানো হবে। পাহাড় তৈরি করে টয়ট্রেনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এমনকী রোপ ওয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।” কপিল স্পোর্টিং ক্লাবের এবারের থিম সেনা জওয়ানদের নিয়ে। কাশ্মীরের পুলওয়ামা ঘটনাকে তুলে ধরবেন তাঁরা তাঁদের থিমের মধ্যে দিয়ে। এছাড়াও থাকবে আরও নজরকাড়া বেশ কিছু থিম ও আলোকসজ্জা।
এবারের চারদিনব্যাপী নিশ্চিন্তপুর এর সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যেও উন্মাদনা প্রচুর। তেহট্ট, বেতাই, পলাশিপাড়া, রঘুনাথপুর, শ্যামনগর, আশরাফপুর প্রভৃতি বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ নিশ্চিন্তপুরে ভিড় জমায় শুধুমাত্র সরস্বতী পুজোর থিম ও আলোকসজ্জা দেখার জন্য। এবারেও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছেন নিশ্চিন্তপুর সরস্বতী পুজো কমিটির কমিটির সদস্যরা।
অপরদিকে ৪০ ফুট উচ্চতার সরস্বতী প্রতিমা সহকারে পুজো করে তাক লাগাবে তেহট্ট থানার মৃগী বোর্ড পাড়ার আমরা কজন ক্লাব। এবার ১১তম বর্ষ বাজেট প্রায় এক লক্ষ টাকা। গ্রামবাসীদের অনুদানের চলে পুজো জানালেন ক্লাব সম্পাদক কৃষ্ণ মণ্ডল, সীমান্তে প্রত্যন্ত গ্রামে এই পুজোকে কেন্দ্র করে বসে মেলা। পুজোর তিনদিন থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে জন্য নিজেদের হাতে তৈরি করা হয় বিভিন্ন মিষ্টির পদ। দুর্গা, লক্ষ্মী নয়, মেয়ে সরস্বতীকে নিয়ে পুজোর ক’দিন মেতে থাকে এই গ্রামের মানুষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.