ছবি: প্রতীকী
বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: মেয়ের প্রাক্তন স্বামীর হাতে খুন শ্বশুর৷ ঘটনাটি ঘটে নদিয়ার হাঁসখালী থানার ঘাঘরাচর বটতলা এলাকায়৷ প্রকাশ্যে বাড়ির সামনে শ্বশুরকে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল জামাইয়ের বিরুদ্ধে৷ এই ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয় এলাকায়৷ খুনের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তের বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়৷ এরপর ওই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা৷
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে৷ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম অমর বিশ্বাস (৪৫)৷হাঁসখালী থানার ঘাঘরাচরের বটতলা এলাকায় তাঁর নিজের বাড়ি৷ যদিও ইদানীং তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে নিজের বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে বেড় হাঁসখালী গ্রামে ভাড়া থাকতেন৷ নিজের বাড়িতে থাকেন তাঁর বৃদ্ধা মা৷ তিনি চোখে একটু কম দেখেন৷ দু’দিন আগে বাড়িতেই পড়ে গিয়ে জখম হন ওই বৃদ্ধা৷ মাকে ওষুধ দেওয়ার জন্য শুক্রবারও বাড়ি এসেছিলেন অমর বিশ্বাস৷ তাঁর বাড়ির সামনে দা নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিল তার মেয়ের প্রাক্তন স্বামী প্রকাশ মণ্ডল৷ মাকে ওষুধপত্র দিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো মাত্রই প্রকাশ তার শ্বশুর অমর বিশ্বাসকে দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে বলে অভিযোগ৷ ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন শ্বশুর অমর বিশ্বাস৷ তাঁকে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়৷ এই ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়৷ জড়ো হয়ে যান স্থানীয়রা৷ তারা চড়াও হন প্রকাশের বাড়িতে৷ অমর বিশ্বাসের নিজের বাড়ির কাছেই বাড়ি প্রকাশের৷
যদিও ওই ঘটনার পর প্রকাশ তো বাড়িতে ছিলই না, তার বৃদ্ধ বাবাও তখন বাড়িতে ছিলেন না৷ উত্তেজিত জনতা অমর বিশ্বাসকে খুনের প্রতিবাদে প্রকাশের বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে৷ ঘরের আসবাবপত্র, সাইকেল-সহ গোটা বাড়িটি ভাঙচুর করে৷ এরপর প্রকাশের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ দমকলের ইঞ্জিন এসে আগুন নেভায়৷ এরপর মৃত অমর বিশ্বাসের মামা তরুণ বিশ্বাস হাঁসখালী থানায় প্রকাশ মণ্ডলের নামে খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন৷
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, প্রতিবেশী প্রকাশ মণ্ডলের সঙ্গে বছর দু’য়েক আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল অমর বিশ্বাসের মেয়ের পূজার৷ তবে, পূজার বাড়ির লোকজন ওই সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিলেন না৷ তবু বছরখানেক আগে একপ্রকার জোর করেই প্রকাশ পূজাকে বিয়ে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়৷ সেই সময় কাজের জন্য মাঝেমধ্যে বাইরে যেত প্রকাশ৷ সপ্তাহখানেক বাদে বাদে বাড়ি আসত৷ তবে, বিয়ের প্রথমে ভাল ব্যবহার করলেও বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই প্রকাশ পূজাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা শুরু করে বলে অভিযোগ৷ এমনকী, কাজকর্ম বন্ধ করে প্রায় প্রতিদিন মদ, গাঁজার নেশা করে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর ওপর অত্যাচার করে আসছিল বলে অমর বিশ্বাসের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ৷ ফলে, স্বামীর হাত থেকে বাঁচতে বাপের বাড়ি পালিয়ে আসেন পূজা৷
এরপর অমরবাবু নিজের বাড়িতে মাকে রেখে কিছুটা দুরে বেড় হাঁসখালী গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হন৷ তবে মাঝেমধ্যে বাড়িতে এসে মায়ের দেখভাল করে যেতেন পেশায় সবজি বিক্রেতা অমর বিশ্বাস৷ যদিও মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মাস তিনেক আগে অন্য একটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন৷ বিষয়টি কিছুতেই মেনে নেয়নি অমর বিশ্বাসের প্রাক্তন জামাই প্রকাশ মণ্ডল৷ রাগে-ক্ষোভে ফুঁসছিল সে৷ মনে মনে শ্বশুরকে খুনের পরিকল্পনা করার ছক কষে ফেলে ৩৬ বছরের প্রকাশ৷ পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, পূর্ব-পরিকল্পনামাফিক শুক্রবার আগাম খবর পেয়ে শ্বশুরের নিজের বাড়ির সামনে অপেক্ষায় ছিল প্রকাশ৷ সম্ভবত মদ্যপ অবস্থায় ছিল সে৷ হাতে ধারালো দা নিয়ে শ্বশুরকে খুন করার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল বাড়ির সামনে৷ মাকে ঔষধ দিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো মাত্র শ্বশুর অমর বিশ্বাসকে দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে চম্পট দেয়৷ অমর বিশ্বাসের খুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা দেখা দেয় ওই এলাকার মানুষের মধ্যে৷ তারা প্রকাশ মণ্ডলের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.