সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জিনাত সঙ্গী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ‘দক্ষিণবঙ্গের গর্ব’। তাই বাঘ-বন্দি অভিযান বন্ধ রেখে ওই বন্যপ্রাণ নিয়ে সচেতনতার প্রচার করছে বনদপ্তর। ফলে অরণ্য ভবনের কড়া বার্তা, বাংলায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ ক্ষেত্র যাতে কোনওভাবেই আগুন না লাগে। পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া দক্ষিণ বনবিভাগকে অরণ্য ভবন জানিয়ে দিয়েছে, এই গ্রীষ্মের মরশুমে ২৪ ঘন্টা নজরদারি চালাতে হবে জিনাত সঙ্গী ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের টেরিটরিতে। কিন্তু ওই বাঘের টেরিটরি ঝাড়খণ্ডের বনাঞ্চল রীতিমতো জ্বলছে। ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে বাংলার পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড় ভায়া ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর। ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের এখন এটাই নতুন টেরিটরি।
আসলে এই শুষ্ক আবহাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলে বিশেষ করে বনমহলের জেলাগুলিতে ফি বছর দাবানলের ঘটনা ঘটে। ২০২০ থেকে ২০২২ যেভাবে জঙ্গলমহলের জঙ্গল পুড়েছে। বিশেষ করে পুরুলিয়ার বনাঞ্চলে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। তবে গত বছর সকলের চেষ্টায় পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। এবার পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের বনাঞ্চল অন্যান্যবারের মতো নয়। এবার জঙ্গলের রাজা বাঘের পদচারণা চলছে পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া দক্ষিণ বনবিভাগেও। তাই অরণ্য ভবনের নির্দেশে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছে এই তিন জেলার বনদপ্তর। ‘দক্ষিণবঙ্গের গর্ব’ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পদচারণা যাতে জঙ্গলমহলের জেলাতে থাকে, তাই এই শুষ্ক মরশুমে আগুন থেকে বাঁচাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এবার এখনও পর্যন্ত সমগ্র পুরুলিয়ার বনাঞ্চলেই সেভাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল তথা চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায় সম্প্রতি পুরুলিয়ায় এসে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ডেরা কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড় ঘুরে দেখেছেন। তারপরই তিনি নির্দেশ দিয়ে যান, বাঘের টেরিটরিতে যাতে কোনোভাবেই আগুন না লাগে। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার বলেন, “জঙ্গলের আগুন ঠেকাতে এবারও আমাদের একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাঘের টেরিটরিতে যাতে কোনোভাবে আগুন না লাগে সেইজন্য ২৪ ঘন্টা একেবারে টিম করে নজরদারি চলছে।” আগুন নেভানোর জন্য বনমহলের এই তিন জেলাতে যেমন ফায়ার ব্লোয়ার রয়েছে। তেমনই বেসিক ফায়ার মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন বিটকে কেন্দ্র করে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার থেকে আগুনের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওই টিম কাজ করছে। তবে বাঘের টেরিটরিতে আলাদাভাবে নজরদারি চলছে ২৪ ঘন্টা। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ তথা সজনেখালির বিট অফিসার মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, “এই গ্রীষ্মে জল খেতে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের লোকালয়ে চলে আসার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যদি জঙ্গলে আগুন লাগে তাহলে কিন্তু বাঘ সরে যাবে।”
তবে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ওই বাঘের বাংলার টেরিটরিতে আগুনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কিন্তু পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ছুঁয়ে থাকা ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমের বাঁশাডেরা, পটমদা এলাকার বনাঞ্চল রীতিমতো জ্বলছে। আর সেই কারণেই গত কয়েকদিন ধরে ঝাড়খণ্ডের অংশে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পদচারণার কোন চিহ্ন মেলেনি। তবে ওই বাঘের পদচিহ্ন নজরে পড়েনি ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়াতেও। তাহলে ঝাড়খণ্ডের পালামৌ থেকে আসা ওই বাঘ গেল কোথায়? পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর প্রজেশকান্ত জেনা বলেন, “ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কোনভাবে পালামৌ থেকে চান্ডিল হয়ে দলমার দিকে চলে গিয়েছে। সেখান থেকে পুরুলিয়া। দলমার জঙ্গল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের থাকার আদর্শ নয়। ওই বাঘটি পুনরায় পালামৌ ফিরে আসতে পারছে না পালামৌ ও দলমার মাঝখানে জনবসতি এলাকা হওয়ায়।”
চলতি ব্যাঘ্র শুমারিতে ভবঘুরে জিনাত সঙ্গীকে পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প ‘টি ওয়ান’ তকমায় চিহ্নিত করার পরেও ওই বাঘটিকে পশ্চিমবঙ্গের বলছে অরণ্য ভবন। তাই তার টেরিটরিতে আগুন ঠেকাতে ২৪ ঘন্টা নজরদারি। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (মধ্যচক্র) ড. সিঙ্গারাম কুলান্দ্রাইভাল বলেন, “অরণ্যে আগুনের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। সেইভাবেই আমাদের কাজ চলছে।” এই সময় জঙ্গলমহলের জেলায় বনাঞ্চলে আগুনের ফলে শুধু হেক্টরের পর হেক্টর বনাঞ্চলই নষ্ট হয় না। মারা যায় বহু ছোট বন্যপ্রাণ। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জঙ্গল ছেড়ে চলে যায় তারা। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায় বলেন, “কোন জঙ্গলে বিপদ, তা বুঝতে পারলে বন্যপ্রাণ সবচেয়ে আগে ওই এলাকা ছাড়ে। আবার সেই জঙ্গল পুনরায় সমৃদ্ধ হলে সবার শেষে ওই জঙ্গলে বন্যপ্রাণ আশ্রয় নিতে আসে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.