সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সৌর বিদ্যুৎ চালিত ট্রান্সমিটার লেজার লাইটে হাজারিবাগের বুনো হাতিদের গতিবিধি জানবে বনদপ্তর। বন্যপ্রাণ ও মানুষের সংঘাত রুখতে তামিলনাড়ুর বান্নারি ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির প্রযুক্তিবিদ্যাকে হাতিয়ার করছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। এই প্রযুক্তি ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে দক্ষিণের ওই রাজ্যের সত্যমঙ্গলম টাইগার রিজার্ভে। তাই সেই প্রযুক্তিতেই ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের বুনো হাতির হামলা রুখবে বনদপ্তর। সেই সঙ্গে এলিফ্যান্ট বিহেভিয়ার ও ইকলজিক্যাল স্টাডি করারও কাজ শুরু হয়েছে এই বনবিভাগে।
ইতিমধ্যেই এই ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি অযোধ্যা পাহাড়তলির বাঘমুণ্ডি বনাঞ্চলের বুনো হাতিদের অন্যতম করিডর কালিমাটি বিটের রাঙামাটি ও বুরুংবুরু মিলিয়ে ছ’টি জায়গায় বসানো হয়েছে। ‘আর্লি এলিফেন্ট ডিটেকশন এন্ড ওয়ার্নিং সিস্টেম’ এই ব্যবস্থাপনায় সাফল্যও পাচ্ছে বনদপ্তর।
কি এই প্রযুক্তি ব্যবস্থা? হাতির করিডর এলাকায় ঘন জঙ্গলের মধ্যে দু’টি প্যানেল থাকছে। একটি প্যানেলে থাকছে ট্রান্সমিটার। সেই ট্রান্সমিটার থেকে লেজার লাইট বেরোবে। সেই লেজার গিয়ে পড়বে আরেকটি প্যানেলে। সেই রিসিভার প্যানেল দেড়শ থেকে দু’শ মিটার বা তার বেশি দূরত্বেও থাকতে পারে। এই দু’টি প্যানেলের ডিভাইসে থাকছে ডিএফও, এডিএফও, রেঞ্জ অফিসার, বিট অফিসার-সহ বনকর্মীদের ফোন নম্বর। ডিভাইসের মধ্যে একটা মোডেম আছে। সেখান থেকে সফটওয়্যারে কন্ট্রোল করা হচ্ছে। সন্ধে বা অন্ধকার হওয়ার পর ওই করিডর এলাকায় প্যানেল বরাবর বুনো হাতি পার হলেই যে নম্বরগুলি ডিভাইসে রয়েছে সেই মোবাইল নম্বরে বার্তা চলে যাবে। ওই দুটি প্যানেলে ক্যামেরা থাকলে মোবাইলে সেই হাতির ছবিও ভেসে আসবে।
তবে ওই ক্যামেরা পরে বসাবে বনদপ্তর। পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও রামপ্রসাদ বদানা বলেন, “এই প্রযুক্তিগত ব্যবস্থায় আমরা সুফল পেতে শুরু করেছি। পরবর্তীকালে এই ব্যবস্থায় আমরা ক্যামেরাও লাগাব। যাতে হাতির সংখ্যাটাও আমরা বুঝতে পারি।” এছাড়া বনাঞ্চল কার্যালয়ে মেইন সার্কিট বোর্ডও বসানো হবে। যে এলাকায় এই প্যানেল বসানো হয়েছে ওই বোর্ডে তা তুলে ধরা হবে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি ইউনিটের একটা আলাদা আলাদা নাম ও নম্বর রয়েছে। মোবাইলে বার্তার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আলো জ্বলে উঠে সাইরেন বাজবে।
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়া বিভাগে যেভাবে হাতির হামলায় ফি দিন যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, তাতে নাজেহাল অবস্থা বনদপ্তরের। গত ডিসেম্বর মাসে পুরুলিয়া বিভাগে প্রায় ৭০ হেক্টর আমন ধানের জমি ক্ষতি করে। সেইসঙ্গে একাধিক কাঁচা বাড়ি ভাঙা-সহ প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। এই কারিগরী ব্যবস্থা রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা সংস্থার তরফে অন্বেষণ পাত্র বলেন, “এই ব্যবস্থায় হাতির গতিবিধি বনদপ্তরকে আগেই জানিয়ে দেবে। ফলে বনদপ্তর আগেভাগে সতর্ক হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবে। হাতির দল এলে সাধারণ মানুষ ভিড় করে তাকে বিরক্ত করতে পারবে না। ফলে ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো যাবে। তামিলনাড়ুর সত্যমঙ্গলম টাইগার রিজার্ভে এই ব্যবস্থা চালু করে সুফল মিলেছে।”
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তামিলনাড়ুর বান্নারি ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজির সহকারি অধ্যাপক সঞ্জয় দেবের মস্তিকপ্রসূত এই ব্যবস্থা। পুরুলিয়া বনবিভাগ হাতির হামলা ঠেকাতে এই প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা ছাড়াও এলিফ্যান্ট বিহেভিয়ার ও ইকলজিক্যাল স্টাডির জন্যও এই ব্যবস্থার রূপায়ণকারী সংস্থাকে নিয়োগ করেছে। বাঘমুণ্ডি বনাঞ্চলের আধিকারিক মনোজ কুমার মল্ল বলেন, “অনেকক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি হাতিদের আচরণ বদলে যাচ্ছে। ভীষণ হিংস্র হয়ে আক্রমণ করছে। তাই আক্ষরিক অর্থেই হাতিদের আচরণ কোন কোন ক্ষেত্রে বদল হচ্ছে সেটা আগাম বুঝে ব্যবস্থা নেওয়াটাও জরুরি হয়ে পড়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.