Advertisement
Advertisement
Snake

বিষ নয়, কবিরাজের ছদ্মবেশে বিদেশে পাচার সাপের তেল! উদ্ধারের পর তাজ্জব বন আধিকারিকরা

ভিনরাজ্যের দুই বাসিন্দাকে শিলিগুড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Forest department official in Siliguri arrested man, allegedly smuggled cobra oil |Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:June 30, 2023 4:18 pm
  • Updated:June 30, 2023 5:46 pm  

তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: কবিরাজের বেশে অসম থেকে শিলিগুড়ি (Siliguri)হয়ে নেপালে পাচার হয় সাপের তেল! পাচারকারীদের গ্রেপ্তারের পর এই তথ্য পেয়ে তাজ্জব বনদপ্তরের আধিকারিকরা। গত সপ্তাহে শিলিগুড়ি জংশন এলাকা থেকে সাপের তেল (Snake Oil), হরিণের চামড়া ও হরিণের শিং-সহ দুই বন্যপ্রাণী পচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বনদপ্তর। ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছেন তাঁরা। গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে ধৃতরা জানায়, তারা ‘বৈদ্য’ বা কবিরাজ। চিকিৎসা পরিষেবা দিতেই সাপের তেল নিজেদের কাছে রেখেছিলেন। পরে হরিণের চামড়া ও শিং উদ্ধার হওয়ার পর সেগুলো তাদের না বলেও দাবি করেছিল তারা। যদিও বনদপ্তরের আধিকারিকরা তাদের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের মতো করে তদন্ত চালিয়ে একাধিক তথ্য হাতে পেয়েছেন।

দার্জিলিং ওয়াইল্ড লাইফ র‌্যাপিড রেসপন্স ফোর্সের রেঞ্জ অফিসার দীপক রসাইলির কথায়, “ধৃতদের পাকড়াও করতেই নিজেদের কবিরাজ হিসেবে পরিচয় দেয় তারা। যদিও পরে আমাদের জেরায় পরে তারা পাচারের কথা স্বীকার করে নেয়।” বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের দু’জনেই বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও শিলিগুড়ি শহরের সমস্ত এলাকা তাদের চেনা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই তারা শিলিগুড়িতে ঘুরে বেড়ায়। শুধুমাত্র শিলিগুড়ি নয়, উত্তরপূর্ব ভারতের অসম (Assam) রাজ্যকেও তারা হাতের তালুর মতোই চেনে। নেপালের (Nepal) একাধিক এলাকাতেও তাদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। এমনকি, তারা যে মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহার করছিল সেই নম্বরগুলি অসমের। তারা অসম থেকেই সাপের তেল সংগ্রহ করে শিলিগুড়ি হয়ে নেপালে পৌঁছে দিত। সেখান থেকে অন্য কোনও হ্যান্ডলারের মাধ্যমে সেই তেল চিন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।

Advertisement

[আরও পড়ুন: বিয়ের আসরে পেটব্যথা, পরদিনই মা হলেন কনে! লুকিয়ে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার কথা স্বীকার কনেপক্ষের]

বন আধিকারিকদের একাংশের ধারণা, অসমের জঙ্গল থেকেই সাপ মেরে তেল সংগ্রহ করে আনত পাচারকারীরা। এমনকি, ‘কবিরাজ’ বেশের আড়ালে আগে অন্যত্রও তারা এই তেল বিক্রি করে থাকতে পারে। তবে, পরে আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে সাপের তেলের পাশাপাশি অন্যান্য বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচারের কাজেও ঢুকেছিল তারা।

কিন্তু সাপের তেল কী? কোথায় ব্যবহার হয়? পাচার কোথায় হচ্ছিল? ‘স্পেকট্যাকল কোবরা অয়েল’ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই এই রহস্যের উন্মোচনে একাধিক সূত্র পেয়েছেন বন আধিকারিকরা। তাঁদের একাংশের দাবি, সাপের বিষ উদ্ধার হওয়া শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গে জলভাত হয়ে গেলেও সাপের তেল উদ্ধারের পরেই ঘুম উড়েছিল তাঁদের। কীভাবে কোথা থেকে সেই তেল আনা হয়েছিল আর কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল? সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল তাঁদের মাথায়। উত্তরবঙ্গ তো বটেই রাজ্যের অন্যান্য কোনো জায়গাতেও এই সামগ্রী উদ্ধার না হওয়ায় উত্তর খুঁজে পাওয়াটা কার্যত কঠিন কাজ হয়েছিল তাঁদের কাছে।

শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালের কেরালার তিরুঅনন্তপুরমের একইভাবে গ্রেপ্তার হওয়া এক পাচারকারীর একটি ঘটনা তাঁদের সামনে আসে। একজন ৪৭ বছরের পাচারকারীকে সেখানে প্রায় ৩৫০মিলি সাপের তেলের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপরেই তদন্তে নেমে বন দপ্তর জানতে পেরেছে, শুধুমাত্র কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াতে (Indonesia)এই সাপের তেল প্রায় পাগলের মতো কিনে থাকেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, ওই তেলের ব্যবহারে কমে যায় ত্বকের ক্যানসার। বাড়ে লাবণ্য, চুল পড়াও কমে যায় এই তেলের ব্যবহারে। এমনকী এই তেল ব্যবহার করলে পুরুষত্বও বাড়ে। কাজেই এই সাপের তেলের দাম আন্তর্জাতিক কালোবাজারে (International smuggling) দাম আকাশছোঁয়া। সেই কারণেই অতি গোপনে এই তেল পাচারের ঝোঁক বাড়ছে বন্যপ্রাণ পাচারকারীদের মধ্যে।

দার্জিলিং ওয়াইল্ড লাইফ র‌্যাপিড রেসপন্স ফোর্সের রেঞ্জ অফিসার দীপক রসাইলি বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া সমেত একাধিক দেশে এই তেলের চাহিদা রয়েছে। তাই তা পাচারও হচ্ছে। আমাদের দেশি কোবরার তেলের চাহিদা ওই সকল দেশে খুবই বেশি।”

[আরও পড়ুন: ধারের টাকা ফেরত চাইলেই অজুহাত দিত বান্ধবী! রাগে ফোন ছিনতাই করে গ্রেপ্তার তরুণ]

তিনি আরও জানিয়েছেন, রীতিমতো অনলাইনে (Online)এই সাপের তেল বা কোবরা অয়েল বিক্রি করা হয়। এমনকী ওই তেলের দামও চড়া। প্রায় ৫ মিলি তেলের দাম প্রায় কুড়ি হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। জানা গিয়েছে, সাপ মেরে চর্বি বার করে সেদ্ধ করে এই তেল বার করা হয়ে থাকে। ভারতীয় কোবরা থেকে অনেক কম পরিমাণ চর্বি হয়ে থাকে। কাজেই এই দেশের সাপের তেলের দামও অনেক হয়ে থাকে বলে জানা গিয়েছে। যে দুই পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁরা শিলিগুড়ি হয়ে নেপালে গিয়ে ওই তেল ভিন দেশে পাচার করার চেষ্টা করছিল। তবে তার আগেই এই তেল-সহ বনকর্মীরা তাদের গ্রেপ্তার করে। ওই দুই পাচারকারীকে আরও জেরা করতে চলেছে বনদপ্তর।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement