সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গে পরিযায়ী পাখিদের ডেরা বলে পরিচিত জলাশয়গুলি থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে পরিযায়ী পাখি। একমাত্র ডুয়ার্সের নাড়ারথলিতেই কিছুটা বেড়েছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। বাকিগুলির প্রায় প্রত্যেকটিতেই পাখির সংখ্যা কমায় উদ্বেগে খোদ বনদপ্তরই। পাখিদের কয়েক মাসের বিদেশবাসের পরিবেশ বদলে গিয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ নিয়ে পরিবেশপ্রেমীদের মধ্যে মতপার্থক্য পরিষ্কার। এই তথ্য মিলতেই পরিবেশ ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। তিনি বলেন, “এটা ভাল লক্ষণ নয়। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিবেশ ফেরাতে যা দরকার, করা হবে।”
সম্প্রতি এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। বনদপ্তর এবং হিমালয়ান নেচার এন্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর যৌথ উদ্যোগে এই সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চারটি জলাশয়ের তিনটিতেই পাখির আনাগোনার সংখ্যা কমেছে। শিলিগুড়ির ফুলবাড়িতে মহানন্দা-তিস্তা লিংক ক্যানেলে, জলপাইগুড়ির গজলডোবায় পর্যটন হাব ‘ভোরের আলো’ লাগোয়া তিস্তা নদীতে এবং কোচবিহারের রসিকবিল পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত। এই তিন জলাশয়ে পাখির সংখ্যা এবার কম।
সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, গজলডোবায় যে পরিমাণ পাখি এসেছিল, তার চেয়ে প্রায় এক হাজার পাখি কমেছে চলতি মরশুমে।
[ টার্গেট মতুয়া ভোট ব্যাংক, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ শাহের ]
গত বছর ৬৭টি প্রজাতির প্রায় ন’হাজার পাখির সন্ধান মিলেছিল। এবার প্রজাতির সংখ্যা বাড়লেও মোট পাখির পরিমাণে প্রায় ঘাটতি রয়েছে এক হাজার পাখি। এবার ৬৯টি প্রজাতির আট হাজার পাখি এসেছে এখানে। কোচবিহারের রসিকবিলে গত মরশুমে ৪৯টি প্রজাতির ৪ হাজার পাখির সন্ধান মিলেছিল। এবার প্রজাতি সংখ্যা ৫৫টি হলেও পাখির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন হাজার। শিলিগুড়ির ফুলবাড়িতে মহানন্দা ব্যারেজর জলে পাখির সংখ্যা আরও কম। গতবার ৬৩টি প্রজাতির সাত হাজার পাখি এসেছিল। এবার ৫৬টি প্রজাতির প্রায় ৪ হাজার পাখি হাজির হয়েছে। শুধুমাত্র আলিপুরদুয়ারের নাড়ারথলিতে পাখির সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। তবে তা সামগ্রিক বিচারে আহামরি নয়। গতবার ২৮টি প্রজাতির ১১শো পাখি গোণা হয়েছিল। এ বছর প্রায় ৩০টি প্রজাতির প্রায় তিন হাজার পাখির দেখা মিলেছে।
ন্যাফের আহ্বায়ক অনিমেষ বসু বলেছেন, পিকনিক এবং জল দূষণের কারণে পাখিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যদিও গজলডোবা ও ফুলবাড়িতে গত কয়েক বছর ধরে স্থায়ীভাবে পিকনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। এই সমস্ত জলাশয়ে পিকনিক বন্ধে প্রচার চালানো পরিবেশপ্রেমী সংগঠন অপ্টোপিক এর তরফে দীপজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, “ওই এলাকাগুলিতে পিকনিক বন্ধ রয়েছে। তাই পিকনিকের কারণটা প্রযোজ্য নাও হতে পারে। পাখিরা অনেক সময় অভ্যাস বদল করে। সেটাও কারণ হতে পারে। পরপর দু’তিন বছর বদলের ধারা লক্ষ্য করলে সঠিক কারণ নির্ণয় করা যাবে।” তবে যেসব জলায়শ থেকে পাখি কমেছে, ফের সেখানে পাখি ফিরতে পারে বলে আশাবাদী তিনি।
[ জটিল অস্ত্রোপচারে ৭ মাসের শিশুর গলা থেকে বেরল আটকে থাকা বরবটি ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.