সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাংলা-ঝাড়খণ্ডের বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে রীতিমতো আশ্রয়হীন হাজারিবাগের হস্তীকূল! ডেরা বাঁধা তো দূর-অস্ত। এক চিলতে জঙ্গলে আশ্রয়ের ছুটতে হচ্ছে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। যে দিকে গতিমুখ, সেই দিকেই বাধা। কোথাও হুলা পার্টির মশালের আগুন, অবিরাম ঢিল-পাথর। আবার কোথাও গাদাবন্দুকের গুলি, শব্দবাজি। ঘরছাড়া হয়ে রণংদেহি বুনো হাতির দল ভাঙছে কাঁচা বাড়ি। নষ্ট করছে ফসল। হাতি-মানুষে যেন অসম যুদ্ধ বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায়।
মাঝে শুধু সূবর্ণরেখা নদী। নদীর একপাশে বাংলা, আরেক পাশে ঝাড়খণ্ড। এই নদী যেন দুই রাজ্যকে আলাদা করে দিয়েছে। একদিকে পুরুলিয়ার ঝালদা। অন্যদিকে, রাঁচির সিলি। কিন্তু হাতির দল তো আর সীমানা মানে না। তাই তারা সুবর্ণরেখা নদী পার হয়ে আসা-যাওয়া তাদের। কখনও তাদের ঠিকানা ঝাড়খন্ডের হাজারিবাগ। আবার কখনও পুরুলিয়ার ঝালদা,বাঘমুন্ডি। কিন্তু বনকর্মীদের তাড়ায় এখন প্রায় সারাদিনই ঝালদায় দেখা মেলে হাতির পালের, আর রাতে সিলিতে। ভোররাতে আবার ঝালদা-বাঘমু্ন্ডিতে। রাতে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নামলে ভোররাতেই আবার তাড়া খেয়ে চলে যেতে হচ্ছে ঝাড়খণ্ডে।
বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় দাঁতাল দলের এমন বিপদের টের পেয়েছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার এক বন্যপ্রাণপ্রেমী সংস্থা। তাই বনদপ্তরের দ্বারস্থ হয়ে এই সমস্যার সমাধানের দাবি তুলেছেন তাঁরা। হাজারিবাগের বুনো হাতির এমন বিপদের কথা উপলব্ধি করেছে পুরুলিয়া বনবিভাগও। এই কারণে, হাতির চলার পথে যাতে কোনও বাধা না তৈরি হয়, তা নিশ্চিত করতে পুরুলিয়া বনবিভাগ আন্তঃরাজ্য সমন্বয় বৈঠক ডাকতে চলেছে।
গত রবিবার ভোরে সুবর্ণরেখা নদী পার হয়ে একটি শাবককে নিয়ে আটটি হাতির একটি দল ঝালদা বনাঞ্চলের খামার বিটের বিশরিয়া পলাশ জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। সেখানে দিনভর স্থানীয় মানুষজনের হাতে ঢিল-পাথর খেয়ে ঝালদা বনাঞ্চলের ড্রাইভিং-এ ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে আশ্রয় পেলেও ভোররাতে বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে ঝালদার হেঁসলার জঙ্গলে ঢোকে। পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও রামপ্রসাদ বদানা বলেন, “এই সমস্যা মেটাতেই ইন্টার স্টেট কো-অর্ডিনেশন মিটিং ডাকা হবে। আগামী সপ্তাহে মাঠা বনাঞ্চলে ওই বৈঠক হবে।’’ বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ড সরকার কার্যত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে, হাতির দলকে দিনের পর দিন তাদের জঙ্গলে রাখবে না। তাই মোটিভেশন স্কোয়াড, এলিফ্যান্ট ড্রাইভিং স্কোয়াড তৈরি করেছে। হাতি তাড়াতে পুলিশও সেখানে কাজ করছে।
ঝালদা বনাঞ্চলের আধিকারিক অমিয়বিকাশ পাল বলেন, “হাতির দল যখন লোকলয়ে প্রবেশ করে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আমরা তাদের যাওয়ার পথ করে দিই। এছাড়া জঙ্গলে থাকলে শুধুমাত্র নজর রাখা হয়। কিন্তু ঝাড়খণ্ড যা করছে তাতে বিপদ বাড়ছে। হাতির দল যেমন সমস্যায় পড়েছে তেমনই হাতি-মানুষে হলে ক্ষয়ক্ষতির ভয় বাড়ছে।” রবিবার ভোর রাতে ঝাড়খণ্ডের বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে একেবারে সুবর্ণরেখা নদীর কোলেখামার বিটের চককেড়িওয়ারি এলাকায় প্রায় এক হেক্টরফসল নষ্ট করে দাঁতাল বাহিনী। ভাঙে কাঁচা বাড়ির একাংশ। পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার কর্মকর্তা অনির্বাণ পাত্রের কথায়, “বন্যপ্রাণ আইনে রয়েছে হাতির যাতায়তের পথে কোনও বাধা দেওয়া যাবে না। ঝাড়খন্ড সরকার যদি হাতির পথ এভাবে অবরুদ্ধ করে তাহলে তো সরকারই আইন ভাঙছে।”
ছবি: অমিত সিং দেও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.