কৃষ্ণকুমার দাস ও ভাস্কর মুখোপাধ্যায়: প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার জেরে এবার শান্তিনিকেতনের সমাবর্তন আম্রকুঞ্জ থেকে সরানোর ভাবনা শুরু হয়ে গেল বিশ্বভারতীতে। যুক্তি হল, সময়ের দাবি ও পরিস্থিতির জেরে আম্রকুঞ্জের বসন্তোৎসব যদি প্রথমে গৌরপ্রাঙ্গণ ও এখন খেলার মাঠে হয়, তবে কেন সমাবর্তন সরানো যাবে না? রাষ্ট্রপতির নির্দেশে এখন যেহেতু প্রতি বছরই সমাবর্তন করা বাধ্যতামূলক, তাই স্বল্পসংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে তা বিকল্প ‘নিরাপদ’ জায়গায় আয়োজন হতেই পারে বলে মনে করছেন কর্মসমিতির একাধিক সদস্য।
[ বাংলা ভাগ হলেও রবীন্দ্র-নজরুল অবিভক্তই, হাসিনার মন্তব্য ছুঁল দুই বাংলার হৃদয় ]
একইসঙ্গে পরিবেশবিদরা হেরিটেজ ঘোষণা হওয়া আম্রকুঞ্জ ও মাধবী বিতানের কয়েকশো গাছকে বাঁচাতে ও সবুজ সংরক্ষণের জন্য অবিলম্বে সমাবর্তনস্থল সরিয়ে নেওয়ারও দাবি করেছেন। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন শনিবার জানিয়েছেন, “আমাদের চিন্তা করতে হবে আম্রকুঞ্জের মতো ফাঁকা জায়গাতে আর সমাবর্তন করা যাবে কি না। বিশ্ববিদ্যালয় এখন অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। কর্মী, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। তার উপর প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এলে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।” সমাবর্তন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনাকে এদিন প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন আশ্রমিক, কর্মী, ছাত্র এবং অধ্যাপকদের একটা বড় অংশই। তবে বিকল্প জায়গা কোথায়? তা নিয়েও ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে রবি ঠাকুরের কর্মতীর্থে। নাট্যঘর, না মেলা মাঠে প্যান্ডেল করে হবে সমাবর্তন? ভাবছেন আশ্রমিকরা।
[ অনলাইনে গোলযোগ, টিকিট বুকিং বন্ধের জেরে স্তব্ধ বালুরঘাট ডিপোর বাস পরিষেবা ]
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি মাত্র তিন মাসের দায়িত্বে যেভাবে বিশ্বভারতীর অঙ্গনে একের পর এক চমক দিচ্ছেন তাতে ‘সাধুবাদ’ দিচ্ছেন অধিকাংশ আশ্রমিক। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচ বছর পর সমাবর্তন এবং হাসিনার মতো ব্যক্তিত্বকে হাজির করা, সহজ কথা নয়। স্বভাবতই বিশৃঙ্খলা ও পানীয় জল বিতর্কের জেরে এবার সমাবর্তন আম্রকুঞ্জ থেকে সরানোর ভাবনাও যে অত্যন্ত ইতিবাচক তা মানছেন রবিতীর্থের অনেকেই। কারণ, মে মাসের রোদ-গরমে খোলা আকাশের নিচে সমাবর্তনে খুবই কষ্ট পান ছাত্রছাত্রী এবং আমন্ত্রিতরাও। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরেই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর শীতকালে এই আম্রকুঞ্জেই সমাবর্তন শুরু হয়। গোটা আম্রকুঞ্জকে অনেক আগেই হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিবেশবিদরা প্রতিবছর হাজার হাজার সংখ্যায় ছাতিম পাতা বণ্টন এবং আম্রকুঞ্জে এমন সমাবেশ করার তীব্র বিরোধিতা শুরু করেছেন। এর উপর ছয় বছর আগে ২০১২ সালে ৭ মে এবং এবছর ২৫ মে দাবদাহ উপেক্ষা করে সমাবর্তন হওয়াতেই বসন্তোৎসবের মতোই সমাবর্তন সরানোর ভাবনা শুরু।
যদিও স্বয়ং সবুজকলি সেন বলছেন,“ আমি আগ বাড়িয়ে প্রচলিত রীতি ভাঙতে পারি না। তবে পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট মেনে আম্রকুঞ্জকে বাঁচাতেই তো বসন্তোৎসবও সরাতে হয়েছে। তবে গুরুদেবের আশ্রমের সব কিছু ঠিক হয় কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত মেনে। এক্ষেত্রে যদি এমন প্রস্তাব আসে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবেই সমাবর্তনস্থল সরতে পারে।” যদিও বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক সাংসদ শিল্পী যোগেন চৌধুরি থেকে আশ্রমিক সুকান্ত ভট্টাচার্যরা সমাবর্তনস্থল সরানোর বিরোধিতা করেছেন। যোগেনবাবু বলেন, “প্রতিবছর যখন সমাবর্তন করতেই হবে তখন তো অল্প ছাত্রছাত্রী আসবে। তা হলে পরিবেশ বাঁচিয়ে আম্রকুঞ্জেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হোক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.