রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে আটকে শ্রমিকরা। আধপেটা খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের। প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানায় লকডাউনে আটকে রয়েছেন তেহট্ট-সহ বিভিন্ন জায়গার ১০ জন কর্মী। তেলেঙ্গানার ডোমরুপচমপল্লি জেলায় তাঁরা একটি কোম্পানির কাজের সূত্রে যান। কিন্তু লকডাউনের জেরে তাঁরা সেখানে আটকে রয়েছেন। কোম্পানির কাজ বন্ধ, যা টাকা ছিল তাও ফুরিয়ে গিয়েছে। আটকে পড়া যুবকদের আক্ষেপ, তেলেঙ্গানা রাজ্যের ওই জেলার কালেক্টরের চারজন আধিকারিক তাঁদের কাছে গেলেও এখনও পর্যন্ত তাঁরা সাহায্য পাননি। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। দু-দু’বার ট্রেনের টিকিট বাতিল হয়েছে। চরম খাদ্য সংকট ও আর্থিক সংকটে দিন গুনছেন তাঁরা।
দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের ডোমরুপচমপল্লি নামক ওই জেলায় আটকে রয়েছেন তেহট্টের ভজন বিশ্বাস, রঘুনাথপুরের বিভাস মণ্ডল, বিকাশ মণ্ডল, চাঁদের ঘাটের সুজয় মণ্ডল, বিরাজ মণ্ডল, সুদীপ মণ্ডল। এছাড়াও শিবপুরের প্রলয় সিহি ও রাকেশ সিহি, করিমপুরের শংকর মণ্ডল এবং ভীমপুরের গৌতম মণ্ডল। প্রত্যেকের অবস্থাই বর্তমানে অর্থ সংকটে রয়েছেন। তেলেঙ্গানায় আটকে থাকা ওইসব কর্মীদের দাবি, লকডাউন শুরু হলে তাঁরা প্রথমে কিছু চাল ডাল কিনে নিয়ে আসেন। এরপর তেলেঙ্গানা প্রশাসনের তরফে কিছু খাদ্য সামগ্রী তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরে তাঁদের খাদ্যের সংকট দেখা দিতে শুরু করে। পকেটের টাকা দিয়েই কিছু খাদ্য সামগ্রী কিনে আনলে এখন তা প্রায় শেষের দিকে।
তেহট্টের ভজন বিশ্বাস ফোনে জানিয়েছেন, একটি কোম্পানির কাজের সূত্রে অধিকাংশ শ্রমিক ডিসেম্বর মাস থেকেই রয়েছেন সেখানে। বাকিরা তারও আগে থেকেই সেখানে রয়েছেন। মার্চ মাসে তাঁদের ফেরার কথা ছিল। সেই মতো আগে থেকেই ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু লকডাউনের জেরে তাঁদের ট্রেনের টিকিট বাতিল হয় মার্চ মাসে। পুনরায় তাঁরা টিকিট কাটেন ফেরার জন্য। ৩রা এপ্রিল ট্রেনে তাদের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রের ঘোষণা মত আবার বেড়ে যায় লকডাউন। কাজেই তাঁদের আর বাড়ি ফিরে আসা হয়নি। তাঁদের দাবি, প্রথমে তেলেঙ্গানা প্রশাসন খাবার দিয়ে গেল পরে তাঁদের দিকে আর চোখ পড়েনি। এদিকে কাজ বন্ধ তাই রোজগার নেই। আর্থিক সংকটের দিকে তাকিয়ে তাঁরা যোগাযোগ করে তেলেঙ্গানার ডোমরুপচমপল্লি কালেক্টরের সঙ্গে। কালেক্টারি থেকে চারজন আধিকারিক তাঁদের কাছে আসেন বলে তাঁরা জানান। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। আধিকারিকরা সাফ জানিয়ে দেন যে কোম্পানির হয়ে তাঁরা কাজ করছেন ওই কোম্পানির কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। খাদ্যের সংস্থান ওই কনট্রাক্টর করে দেবেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে কোম্পানির কাজ বন্ধ। কনট্রাক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও একই কথা বলেন। পরিস্থিতি বেগতিক। কীভাবে পেটের জ্বালা মেটাবেন তার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া তেহট্টের শ্রমিকেরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.