Advertisement
Advertisement

প্রিয়জন হারানোর বেদনা চেপে অন্যদের সতর্কবার্তা, পণ্যবাহী গাড়ির পিছনে লেখা মূল্যবান কথা

কোন ঘটনার প্রেক্ষাপটে কী লেখা গাড়িতে, জানুন কাহিনি।

Food container driver in East Burdwan writes few words for traffic awarness
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 28, 2020 10:12 pm
  • Updated:May 28, 2020 10:12 pm  

ধীমান রায়, কাটোয়া: “শান্তিতে ঘুমাতে চাইলে ছেলেকে বাইক দেবেন না।” “মাথা উঁচু করে চলতে চাইলে মেয়েকে মোবাইল দেবেন না।” পণ্যবাহী ছোট কনটেনারের পিছনে লেখা দুটি উপদেশের কথা। না, কোনও মণীষীর বাণী নয়। নিতান্তই এক ছাপোষা মানুষের দুটি মাত্র ‘উপদেশ’, তাঁরই মতন অভিভাবকদের উদ্দেশে। তাঁর মতো স্বজন হারানোর অব্যক্ত যন্ত্রণা যাতে অন্য আর কাউকে পেতে না হয়, তার জন্যেই এই পদক্ষেপ তাঁর।

বৃহস্পতিবারের সকাল। পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারে একটি চায়ের দোকানের সামনে থামল একটি বেকারি সংস্থার ছোট কনটেনার। চালক নেমে পিছনের গেট খুলে রুটি, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি নামিয়ে দিলেন চায়ের দোকানে। তারপর টাকা বুঝে নিয়ে ফের গাড়িতে চড়লেন। এই টুকু সময়ের মাঝেই উপস্থিত সকলের চোখে পড়ে মোটা মোটা অক্ষরে লেখা ওই দুটি উপদেশ। নিচে লেখা – সৌঃ চালক। তবে নিছকই উপদেশ বিলিয়ে দেওয়ার জন্য ওই চালক গাড়ির পিছনে এই ধরনের উপদেশের কথা লেখেননি। কারন তিনি এখনও বয়ে চলেছেন তার নিদারুণ অভিজ্ঞতার স্মৃতি, স্বজন হারানোর অব্যক্ত যন্ত্রণার ভাঁর। তাই কনটেনারের সাদা গায়ে লাল রঙে লিখে রেখেছেন এই ধরনের উপদেশ। যাতে আর কোনও অভিভাবককে তাঁর মত আঘাত পেতে না হয়।

Advertisement

[আরও পডুন: ২১ বছর পর হারিয়ে যাওয়া স্বামীকে ফিরে পেলেন স্ত্রী, সৌজন্য করোনা ভাইরাস]

আলাপ করে জানা গেল, পশ্চিম বর্ধমান জেলার একটি বেকারি সংস্থার গাড়ি এটি। চালকের নাম সহদেব মুদি। তিনি সংস্থার গাড়িতে পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেকারির সামগ্রী সরবরাহ করেন। জিজ্ঞাসা করতে তিনি জানান, সন্তানদের সুরক্ষার জন্য অভিভাবকদের উদ্দেশে এই উপদেশ তাঁর নিজস্ব ভাবনা থেকেই লিখেছেন। ভাবনা বলা ভুল। বরঞ্চ এক নিদারুণ অভিজ্ঞতার কথা বলা যায়।

[আরও পডুন: গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ৩৪৪ জন, সংক্রমণের হারে বাড়ছে আতঙ্ক]

সহদেববাবুর বাড়ি জামশেদপুরে। দুর্গাপুরে কর্মসূত্রে থাকেন। তাঁর কথায়, “আমাদের বংশের একমাত্র পুত্রসন্তান, আমার ভাইপো বছর সাতেক আগে দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন বাইক দুর্ঘটনায় মাত্র ২২ বছর বয়সে মারা যায়। ওকে বহুবার জোরে বাইক চালাতে নিষেধ করা হত। শোনেনি। তার ফল আজও আমরা ভোগ করছি। তাই আর পাঁচজনকে বলি, ছেলেকে বাইক দেবেন না।” আর মেয়েকে মোবাইল দিতে আপত্তি কেন? তার উত্তরে সহদেববাবু জানালেন, “আমার মাসতুতো দাদার মেয়ে গ্র্যাজুয়েশন পড়তে পড়তে মোবাইলে প্রেম করেছিল। বছর দুই আগে পালিয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে বহু চেষ্টা করেও তার খোঁজ পাইনি।” তাহলে নিজের মেয়ে কি স্মার্টফোনের জন্য বায়না করেনি? সহদেববাবুর উত্তর, ” আমার মেয়ের এখনও মোবাইল ফোন নেই। তবে একটি স্কুটি কিনে দিতে বায়না করছিল। ওকে সাফ বলে দিয়েছি, আমার কাছে দুটি জিনিস চাইলে কোনওদিন পাবে না। প্রথমত দু’চাকার গাড়ি, দ্বিতীয়ত মোবাইল।”

ছবি: জয়ন্ত দাস।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement