সুব্রত বিশ্বাস: শীত পড়েনি জাঁকিয়ে। উত্তর-পূর্ব ভারতে শৈত্যের দাপটও নেই ততটা। এর মধ্যেই ট্রেন লেটের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে হাওড়া, শিয়ালদহে আসা ট্রেনগুলিও পৌঁছচ্ছে অস্বাভাবিক দেরিতে। বৃহস্পতিবার হাওড়ায় রাজধানী এক্সপ্রেস আসে ৫০ মিনিট দেরিতে। সাড়ে চার ঘণ্টা দেরিতে হাওড়া পৌঁছয় দুন এক্সপ্রেস, কালকা মেলও পৌঁছয় সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি দেরি করে। শীতের প্রভাব বাড়ার সঙ্গে চিন্তার ভাঁজও বাড়ে রেলকর্তাদের কপালে। এবার শীতে সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে একাধিকভাবে। তবুও লেটের ফিরিস্তি বলছে, প্রকৃতিকে টেক্কা দেওয়া দায় যন্ত্রের।
রেল বোর্ড পূর্ব রেল, পূর্ব-মধ্য রেল, উত্তর রেল-সহ আরও কিছু রেলকে শীতের মরশুমে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। শীতে কুয়াশার দাপটে ট্রেন যাতে সময়মতো চলে এবং লাইনে ফাটলের জন্য দুর্ঘটনা না ঘটে, সেগুলি দেখার পাশাপাশি ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কর্মসূচিগুলি হল রাতে নিয়মিত লাইন পরীক্ষা করে দেখতে হবে৷ এছাড়া লাইনে ফাটল তড়িঘড়ি মেরামতির বন্দোবস্ত করতে হবে৷ ট্রেন রুটে চালক ও গার্ডের সঙ্গে নিয়মিত স্টেশন মাস্টার ও কন্ট্রোলারদের যোগাযোগ রাখতে হবে। এর পাশাপাশি সিগন্যাল ব্যবস্থা আরও আধুনিক করে তুলতে হবে৷ যাতে ঘন কুয়াশাতেও সিগন্যাল দেখতে কোনও সমস্যা না হয়৷ এছাড়া দৃশ্যমানতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাড়ির গতি কমানো-বাড়ানো করতে হবে। ইত্যাদি বিষয়গুলিতে নজর দিলে ট্রেন সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব বলে দাবি রেল বোর্ডের। এত আয়োজন সারতে বিভাগীয় কর্তাদের সঙ্গে জিএমদের বৈঠক হয়েছে বারবার। প্রতি মঙ্গলবারই পূর্ব রেলের জিএম এ নিয়ে বৈঠক করছেন। বারবার কর্তাদের সময়ানুবর্তিতা নিয়ে নানা পদক্ষেপ করার কথা বলছেন। তবুও বিপত্তি ঘটাচ্ছে প্রকৃতির খেয়াল।
শীতের রাতে ট্রেনে যাত্রীদের জবুথবু দশার সুযোগে অপরাধ যাতে না বাড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতেও একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে রেল। এসকর্ট বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই শ্রেণির কর্মীরা যাতে গন্তব্যে পৌঁছে অবসাদগ্রস্ত হয়ে না পড়েন, সেই জন্য সেখানে বিশ্রামের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ট্রেন ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ালে ট্রেন থেকে নিচে নেমে চারিদিকে টর্চ ফেলে ট্রেন দাঁড়ানোর কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি, কোনও অপরাধ বা অপরাধী ট্রেনটিতে এসেছে না কি তা দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রেন ক্যাপ্টেন বা সিনিয়র অ্যাটেনড্যান্টকে সবদিকে শ্যেনদৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ট্রেন লেট মানে খাবারের সমস্যা। এবারে সেই সমস্যা এখনও শুরু হয়নি, তবে হবে বলে জানান আইআরসিটিসির গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস চন্দ্র। তিনি বলেন, অস্বাভাবিক দেরি হলে খিচুড়ির সঙ্গে আচার দেওয়া হবে। যা বাঙালি যাত্রীদের মনপসন্দ। ২০ ঘণ্টার বেশি জার্নি হলে এক বোতল বাড়তি রেল নীরের বোতল দেওয়া হবে। সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার অস্বাভাবিক দেরিতে হাওড়া আসে এমন ট্রেনের সংখ্যা কম নয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অমৃতসর মেল, অমৃতসর এক্সপ্রেস, মুম্বই মেল, যোধপুর এক্সপ্রেস, বাঘ এক্সপ্রেস ও পূর্বা এক্সপ্রেস৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.