সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৯৭৮-এর ভয়াল বন্যার স্মৃতি ফিরল রাজ্যে। রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটাই পর্যবেক্ষণ। রাজ্যের পাঁচটি জেলার একাংশ জলের তলায়। ঝাড়খণ্ডের অবিরাম বৃষ্টির জেরে ব্যারেজগুলি নাগাড়ে জল ছাড়তে থাকায় বিপদ কমার কোনও ইঙ্গিত নেই। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ত্রাণ শিবিরের আশ্রয়ে। বিপদে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। ঘাটালে হেলিকপ্টার নামিয়েও কাউকে উদ্ধার করা যায়নি।
বৃষ্টি কিছুটা ধরেছে। তবে জলবন্দি এলাকার বাসিন্দাদের পরিত্রাণ নেই। সবথেকে খারাপ অবস্থা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের। এই মহকুমার ৮১টি মৌজা প্লাবিত। ঘাটাল, দাসপুরে ৪০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে ৬০০টি পরিবার। ঘাটালে হেলিকপ্টার নামিয়ে একজন জলবন্দিকেও উদ্ধার করা যায়নি। মই নামিয়েও কাজে আসেনি। শনিবার ফের সেনাবাহিনীর চপার যাবে। পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরহনা এবং বাঁকুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জামালপুরের ১২টি গ্রাম জলের তলায়। কুলটি এবং আসানসোলে জলের নীচে রয়েছে শ্মশানঘাট। ছিন্নমস্তা মেলার পাশে মঞ্চে কোনওরকমে চলছে কাজ। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। এদিকে বীরভূমের লাভপুরের কয়কেশো পরিবার ১০দিন জলবন্দি। ত্রাণ পৌঁছতে শীতল গ্রামে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তবে জল কিছুটা নামতে শুরু হয়েছে সাপের উপদ্রব। এদিন লাভপুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে যান পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। হুগলির খানাকুলিতে নৌকা ডুবে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। ২৫ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি ডুবে য়ায়। বাকিদের খোঁজ চলছে। হুগলির আরামবাগে বিয়েবাড়িতে ঢুকে পড়েছে জল। যা অবস্থা তাতে বিয়ে পণ্ড হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জলবন্দিদের উদ্ধারে নেমেছে এনডিআরএফও।
রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ অবস্থা হয়নি। এবার আরও বেশি জল ঢুকেছে। মুখ্যমন্ত্রীর আক্ষেপ, মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলে এতটা দুর্গতি হত না। তবে তিনি মনে করেন মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ সবাই শেষ বিন্দু পর্যন্ত সম্পত্তি বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এই নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকায় তিনি ফের মুখ খোলেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, কেন্দ্রকে তিনি আর কত চিঠি লিখবেন। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের রিপোর্ট বর্তমান সরকার করেছে। এই সরকারের আমলে কেলেঘাই, কপালেশ্বরীর সংস্কার হয়েছে। নিম্ন দামোদর প্রকল্পের কাজ হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের ২০৭টি ত্রাণ শিবিরে প্রায় ৪৫ হাজার দুর্গত রয়েছেন। শুক্রবার তিস্তা ব্যারাজ জল ছাড়ে ৩৯,৯৬৪ কিউসেক, মাইথন থেকে জল ছাড়া হয় ৫৬,৬৮৪, পাঞ্চেত জলাধার থেকে ১,৩২,৩৭২ কিউসেক জল ছাড়া হয়। ডিভিসি-র দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ১,৮২,২৫০ কিউকেস জল ছাড়ায় বর্ধমান এবং হুগলির একাংশে ফের ভাসার সম্ভাবনা রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.