বাবুল হক, মালদহ: বিহার ও উত্তরপ্রদেশের জল নেমে মালদহে গঙ্গা আর ফুলহার নদীর জলস্তর বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যে জেলার পাঁচটি ব্লকের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। মানিকচক, চাঁচোল-২, হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়া-১ এবং কালিয়াচক-৩ নম্বর ব্লকে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রশাসনের কর্তারাও।
ওই পাঁচ ব্লকে সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য। ত্রাণ বিতরণ ও দুর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর জন্য প্রশাসনিক মহলে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সোমবার সকালে মানিকচকের গোপালপুরে একটি বাঁধ ভেঙে আরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ ও পাটনার জলস্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং গত ৪-৫ দিন ধরে ক্রমাগত বৃষ্টির জন্য মালদহ জেলার মানিকচক ব্লকের ৫০ হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে রয়েছে। মানিকচক ব্লকের বানভাসি মানুষদের অবস্থা দেখতে লঞ্চে ও স্টিমারে চেপে বিভিন্ন এলাকায় যান সভাধিপতি ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সঙ্গে ছিলেন এডিএম অশোক মণ্ডল, মানিকচক থানার ওসি দেবব্রত চক্রবর্তীও। মালদহ জেলা পরিষদের তরফে বানভাসিদের প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। বিতরণ করা হয় ত্রিপল, চিঁড়ে-গুড়, বস্ত্র, গবাদিপশুর খাবার ওষুধপত্র। নারায়নপুর ও গদাই চরে নতুন করে ভাঙন দেখা গিয়েছে। নারায়ণপুর চরে যেখানে বন্যার জল বিপদসীমার মাত্রা ছাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে সেখানকার মানুষদের ইতিমধ্যে লঞ্চে করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, মালদহ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। জেলার কালিয়াচক-৩, মানিকচক এবং রতুয়া-১ নম্বর ব্লকের লক্ষাধিক মানুষ চারদিন ধরে জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। রতুয়ার মহানন্দাটোলা এবং বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েক হাজার মানুষ প্লাবনের কবলে পড়েছেন। স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোথাও রাস্তার উপর দিয়ে জল বইছে। রতুয়ার দেবীপুরের বাঁধ ভেঙে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করেছে। কালিয়াচক-৩ নম্বর ব্লকের পারদেওনাপুর শোভাপুরেও রাস্তার উপর দিয়ে জল বইছে। এখানেও স্কুলে গঙ্গার জল ঢুকেছে। স্কুল বন্ধ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মেডিক্যাল টিম ও ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে।
গঙ্গা ও ফুলহার নদীর জল বাড়ায় বন্যার কবলে পড়েছেন মানিকচকের একাধিক গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। মানিকচকের গঙ্গা ও ফুলহার নদীর তীরবর্তী গ্রাম পঞ্চায়েত হীরানন্দপুর, দক্ষিণ চন্ডীপুর, মানিকচক এবং গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অসংরক্ষিত এলাকায় জল ঢুকেছে। জমির ফসল, শাকসবজি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “দুর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হচ্ছে। ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বন্যা মোকাবেলায় কাজ চলছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.