সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় শরতেও ভারী বৃষ্টিতে ভাসছে বাংলা। আর তার জেরেই জেলায়-জেলায় জলযন্ত্রণায় ভুগছে আমজনতা। কোথাও বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। তো কোথাও জাতীয় সড়কে নেমেছে ধস। কোথাও আবার নদী বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। সবমিলিয়ে দুর্গাপুজোর মুখে বাংলার জেলায়-জেলায় দুর্যোগের মেঘ ঘনাচ্ছে বলেই আশঙ্কা।
শনিবার রাত আটটার পর বীরভূম জেলার নলহাটি-২ ব্লকে ব্রাহ্মণী নদীর বাঁধ ভাঙে। যার জেরে প্রসাদপুর-সহ আরএ ৫-৬টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। কোথাও হাঁটু জল তো কোথাও কোমর পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। একাধিক বাড়িও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জানা গিয়েছে, রাতেই বৈধরা জলাধার থেকে প্রায় ১৬ হাজার ২০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। যার জেরে জলস্ফীতি ঘটে। নদীর পাড়ে থাকা একটি গোয়াল ঘর ভেঙে পড়ে। এরপরই চুঁইয়ে চুঁইয়ে জল ঢুকতে শুরু করে গ্রামের ভিতরে। খবর পেয়ে এলাকার সমস্ত স্কুলগুলিতে বন্যার্তদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। রাতেই গ্রামে আসেন জেলাশাসক বিধান রায়। তিনি প্রায় ভোররাত পর্যন্ত ট্রাক্টরে চেপে বন্যার্তদের বাড়িতে গিয়েছেন। তাঁদের স্কুলগুলিতে আশ্রয় নেওয়ার আর্জি জানান। ছিলেন বিডিও হুমায়ুন চৌধুরীও। এদিকে এদিন সকালে ফের বৈধরা জলাধার থেকে ৬ হাজার ৪৫ কিউসেক জল ছাড়া হয়। ফলে আরও বেশ কিছু গ্রাম জলে ভাসে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কামালপুর গ্রাম। সেচ দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে ঝাড়খণ্ডে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। সেই জল জমা হয়েছে জলাধারে। ফলে অস্বাভাবিক চাপ পড়ছে জলাধারে। এদিকে মাত্র ২ হাজার কিউসেক জল ছাড়লেই গ্রামগুলি ভেসে যায়। অথচ ইতিমধ্যে প্রায় ২২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ব্রাক্ষ্মণী নদীর বাঁধ ভাঙায় তথৈবচ অবস্থা মুর্শিবাদের নবগ্রামেরও।
এদিকে পাহাড় ও সমতলে লাগাতার বৃষ্টির জেরে জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীর দোমোহনি থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত হলুদ সতর্কতা জারি করেছে সেচদপ্তর। গত দুদিন ধরে সিকিম পাহাড়ের পাশাপাশি সমতলেও লাগাতার বৃষ্টি চলছে। যার জেরে ফুলেফেঁপে উঠছে তিস্তা। এদিন সকালে তিস্তার গজলডোবা ব্যারেজ থেকে ১ হাজার ৭৫৯ দশমিক ৯৮ কিউসেক জল ছাড়ায় জলস্তর আরও বেড়ে যায়। যার জেরে তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করে সেচদপ্তর। পাশাপাশি রাতভর বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে জলপাইগুড়ি শহরের একাধিক এলাকা।
এদিকে লাগাতার বৃষ্টির জেরে ধস নেমেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে। যার জেরে বাংলা-সিকিম যোগাযোগ বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। কালিম্পং, কার্শিয়াং দিয়ে ঘুরিয়ে গাড়ি চালানো হয়েছে। ভয়াবহ ধস নেমেছে মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের পুঠিমারী পল্টন ব্রিজের রাস্তায়। ডাকবাংলা থেকে পাকুর যাওয়ার একমাত্র রাস্তা ১০৬ নম্বর জাতীয় সড়কে ধসের ফলে বিঘ্নিত যান চলাচল। বাংলার সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের যোগাযোগের মূল রাস্তা এটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.