সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পাটুলির ভাসমান বাজার এবার পুরুলিয়াতেও৷ বাংলার হস্তশিল্পকে বেশি করে বিপণনের স্বার্থে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে এই মার্কেট৷ পুরুলিয়া পুরসভার অন্তর্গত সাহেব বাঁধের উলটোদিকে নূতন বাঁধের জলাশয়ে তৈরি হচ্ছে হস্তশিল্পের ভাসমান বাজার৷ আগামী বছরের মধ্যেই বাজার তৈরির কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ৷
জেলায় পর্যটনের প্রসার ঘটাতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে পুরুলিয়া পুরসভা। প্রস্তাবিত জাতীয় সরোবর সাহেব বাঁধকে কাশ্মীরের ডাল লেকের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে৷ চালু হয়েছে শিকারা৷ পুরুলিয়া পুরসভা নিজস্ব পর্যটন বিভাগও চালু করার কাজও চলছে। শিকারা পয়েন্টের পাশে রয়েছে ঘোড়ার গাড়ির স্ট্যান্ডও৷ এবার নজর সাহেব বাঁধের উলটোদিকে নূতন বাঁধ বা কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল ট্যাংকে৷ সেখানে ভাসমান বাজার গড়ে বাংলার হস্তশিল্প মার্কেটকে আরও সুন্দর করে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার পাটুলির ধাঁচে এই ভাসমান বাজার নির্মাণে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করার কাজে লেগে পড়েছেন পুর আধিকারিকরা৷
জানা গিয়েছে, যে সংস্থার হাত ধরে পাটুলির ভাসমান বাজার তৈরি হয়েছে, সেই সংস্থাকে দিয়েই নূতন বাঁধ প্রকল্পের ডিপিআর তৈরি করাচ্ছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। পুরুলিয়া পুরসভার লক্ষ্য, আগামী এক বছরের মধ্যে এই ভাসমান বাজার গড়ে তোলার। অর্থাৎ ২০২০ সালে পুরভোটের আগেই এই ভাসমান বাজার সম্পূর্ণ করতে চায় পুরসভা। পুরুলিয়ার পুরপ্রধান শামিম দাদ খান বলেন, ‘নূতন বাঁধের প্রস্তাবিত ভাসমান বাজারে আমরা বাংলার হস্তশিল্পের মার্কেট তৈরি করব। এই কাজের মধ্য দিয়ে আমরা পর্যটনের প্রসার ঘটাতে চাই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়া শহরকে সাজিয়েগুছিয়ে এই শহরকে যে ট্যুরিস্ট লুক দেওয়ার কথা বলেছিলেন, এই প্রকল্প সেই কাজেরই অঙ্গ।’
২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই পুরসভার কাজকর্ম দেখতে যান রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম৷ তখনই সাহেব বাঁধের উলটোদিকে নূতন বাঁধ দেখে ভাসমান বাজার গড়ার কথা ঘোষণা করেন। তারপরেই পুরুলিয়া পুরসভা ওই দপ্তরের সচিবকে চিঠি লিখে এই প্রকল্পের কথা জানায়। চিঠির প্রতিলিপি পৌঁছায় মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগেও। তারপরেই মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ মাস ছয়েক আগে খড়গপুরের সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে ওই প্রকল্পের জায়গাটি পরিদর্শন করতে পাঠায়। কিন্তু সেবারের মতো বিষয়টি ঠান্ডা ঘরেই আটকে যায়। তখন পুরপ্রধান শামিম দাদ খান নিজে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীকে চিঠিতে বিস্তারিত জানান৷ তাতেই কাজ হয়েছে৷ এরপরই ডিটেলস প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই পুরুলিয়া শহরকে ট্যুরিস্ট লুক দিতে এই ভাসমান বাজারের হস্তশিল্পের মার্কেটে পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ,বাঁশ থেকে তৈরি নানা হস্তশিল্প, বাঁকুড়ার টেরাকোটা, ডোকরা, মেদিনীপুরের পটশিল্প,কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল-সহ রাজ্যের বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রী এক ছাতার তলায় বিক্রি করা হবে৷
তবে এই ভাসমান বাজার তৈরির জন্য গোটা বাঁধকে কাজে লাগানো হবে না। ওই জলাশয়ের একাংশ জুড়ে এই বাজার হবে। তবে এই নতুনত্ব আনতে গিয়ে জলাশয়টি যাতে কোনওভাবেই দূষণের কবলে না পড়ে, সেই বিষয়টিও দেখা হচ্ছে৷
ছবি: সুনীতা সিং৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.