অর্ণব আইচ: কলাইকুন্ডার আকাশে চার যুদ্ধবিমানের ছায়াযুদ্ধ। এটাই ছিল মোহনার প্র্যাকটিক্যাল সিলেবাসের শেষ পর্যায়। শুক্রবার সকালে ‘হক জেট’ যুদ্ধবিমানটি কলাইকুন্ডার রানওয়ে ছোঁয়ামাত্রই ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহনা সিংকে যুদ্ধবিমানের প্রথম মহিলা পাইলট বলে ঘোষণা করল বায়ুসেনা। হাতে হেলমেট নিয়ে যুদ্ধবিমান থেকে নেমে এলেন মোহনা।
বায়ুসেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহনা সিং, ভাবনা কান্থ ও অবনী চতুর্বেদী এই তিন মহিলা পাইলট গত ২০১৬ সালের জুন মাসে ট্রেনিং শুরু করেন। সপ্তাহ খানেক আগে ভাবনা কান্থ মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমানের সিলেবাস শেষ করে পূর্ণ যুদ্ধবিমানের পাইলট হয়ে উঠেছেন। এবার তা হলেন মোহনাও। সম্প্রতি তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মেদিনীপুরের কলাইকুন্ডায়। একাই যুদ্ধবিমান ‘হক জেট’ চালিয়ে কখনও ঘুরেছেন এই রাজ্যের আকাশে। আবার কখনও গিয়েছেন ওড়িশা আবার কখনও ঝাড়খণ্ডের আকাশে। মোট ৫০০ ঘণ্টা উড়ানের রেকর্ড রয়েছে মোহনার। তার মধ্যে ৩৮০ ঘণ্টাই কেটেছে ‘হক এমকে ১৩২ জেট’ যুদ্ধবিমান চালিয়ে।
এই যুদ্ধবিমান চালিয়েই তিনি আকাশে ‘এয়ার টু এয়ার কমব্যাট’ শিখেছেন। উড়ন্ত অবস্থায় কীভাবে মিসাইল ছুড়ে শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান বা হেলিকপ্টার ঘায়েল করতে হয়, সেই প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তিনি। আবার ‘এয়ার টু গ্রাউন্ড’-এ কীভাবে কলাইকুন্ডা থেকে উড়ে গিয়ে কোনও টার্গেটের উপর বোমা ফেলতে হয়, সেই প্রশিক্ষণও তাঁকে দেওয়া হয়। বায়ুসেনার এক আধিকারিক জানান, পাকিস্তানে গিয়ে বায়ুসেনা বিমানের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে উত্তেজিত ছিলেন প্রত্যেক প্রশিক্ষণরত পাইলটই। তাই তাঁরাও চাইতেন যেভাবে পাকিস্তানে গিয়ে সুখোই-৩০ শত্রুঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, সেভাবেই ‘হক জেট’ নিয়ে যথাসম্ভব ভাল করে ‘টার্গেট’ হিট করতে। কলাইকুন্ডা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে দুধকুন্ডি। সেখানে ফাঁকা মাঠের উপর ‘টার্গেট’ রাখা থাকে। কোন টার্গেটের উপর ‘বম্বিং’ করতে হবে, তা আগে থেকে জানানো হয় পাইলটদের। দুধকুন্ডিতে রয়েছে বায়ুসেনার কন্ট্রোল রুম। কোনও প্রশিক্ষণরত পাইলট দুধকুন্ডিতে ‘টার্গেট’ হিট করতে পেরেছেন কি না, তা মনিটরিং করা হয় সেখান থেকে। কলাইকুন্ডার রানওয়ে থেকে বহুবার তাঁকে উড়ে যেতে হয়েছে দুধকুন্ডিতে। সেখানে তিন কিলোগ্রামের বোমা টার্গেটের উপর ফেলে তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছে রানওয়েতে।
একই সঙ্গে প্রশিক্ষণের সময় বেশ কিছু যুদ্ধের মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহনা সিং। রীতিমতো টিম করে আকাশে নকল যুদ্ধ করতে হয়েছে শত্রুপক্ষের বিমানের সঙ্গে। এ ছাড়াও উড়ন্ত অবস্থায় বিমান থেকে রকেট ও বন্দুক ছোড়ার মহড়াও করতে হয়েছে তাঁকে। তার সঙ্গে ছিল আকাশে যুদ্ধবিমানের ‘ডগ ফাইট’ও। এদিন সকালেও তাঁকে সিলেবাসের শেষ পর্যায়ে এসে ‘ডগ ফাইট’ করতে হয়। পুরোদস্তুর পাইলট হওয়ার ফলে এবার দেশের যে কোনও বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধবিমান চালিয়ে তাঁকে যুদ্ধের মহড়া দিতে হবে। শত্রুপক্ষের আঘাত থেকে বাঁচা ও শত্রুকে প্রত্যাঘাতের জন্য সারাক্ষণই এই মহিলা পাইলটকে তৈরি থাকতে হবে বলে জানিয়েছে বায়ুসেনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.