বাবুল হক, মালদহ: গঙ্গায় কুমির! এবার মৎস্যজীবীদের জালে উঠে এল আস্ত একটা কুমির৷ আর সেই কুমির ঘিরেই দিনভর তোলপাড় গঙ্গাপাড়ের গ্রাম বৈষ্ণবনগরের পারলালপুরে৷
মাঝরাতে মৎস্যজীবীদের জালে কুমির উদ্ধার হওয়া ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে৷ জলের কুমিরকে ডাঙায় তুলে আনাটাই বড় বিপদ হয়ে দাঁড়ায় মৎস্যজীবীদের কাছে৷ পরে দড়ি দিয়ে হাত-পা ও লেজ বেঁধে কুমিরটিকে কব্জায় আনতে সমর্থ হন তাঁরা৷ তারপর গঙ্গার পারলালপুর ঘাটে কুমিরটিকে একটি ছোট খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয় অন্তত দশ ঘণ্টা। শোরগোল পড়ে যায় গোটা এলাকায়৷ কুমির দেখতে নদীর পাড়ে ভিড় উপচে পড়ে কৌতুহলীদের৷ তার উপর কুমিরের সঙ্গে সেলফি তোলার হিড়িক! ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে পুলিশকেও। শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে জ্যান্ত কুমিরটিকে উদ্ধার করেন জেলা বন দপ্তরের কর্মীরা৷
লরিতে তুলে কুমিরটিকে জেলা বন দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ মালদহের বিভাগীয় বনাধিকারিক কৌশিক সরকার বলেন, ‘‘জলের কুমিরকে কখনওই ডাঙ্গায় রাখা যাবে না৷ আমরা কুমিরটিকে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে উত্তর গঙ্গায় ছেড়ে দেব৷ তার আগে কুমিরের মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হবে৷ সুস্থ রয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে৷’’
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস কয়েক আগে থেকেই গঙ্গায় কুমিরটিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। শেষবার দেখা যায় ফরাক্কা সেতুর অদূরেই বৈষ্ণবনগর থানা এলাকার ভাঙ্গাপাড়ায়। কখনও জলে, তো কখনও ডাঙায় দেখা গিয়েছে। গ্রামের পাশেই গঙ্গার তীরে কুমির ঘোরাঘুরি করায় আতঙ্ক বিরাজ করছিলই। কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জেলেদের মাছ ধরার কাজও৷ জেলেরাও কুমিরের ভয়ে জলে নামতে সাহস পাচ্ছিলেন না৷
মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার পারলালপুর, শোভাপুর-সহ গঙ্গার তীরবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দারা পেশায় মৎস্যজীবী৷ কালিয়াচক-৩ নম্বর ব্লক মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক তথা স্থানীয় বাসিন্দা মঙ্গলচন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, রোজকার মতো শুক্রবার রাত বারোটা নাগাদ পারলালপুর ঘাট থেকে গঙ্গানদীতে মাছ ধরতে নামেন মহাদেব চৌধুরি, শম্ভু হালদার-সহ এলাকার ১০-১২ জন মৎস্যজীবী৷ নদীতে ঘণ্টা খানেক জাল টানার পর তাঁরা বুঝতে পারেন, জালে কোনও ‘বড়সড় মাছ’ ধরা পড়েছে। কিন্তু জাল টেনে গঙ্গার চরে তুলতেই জেলেদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। জালে উঠে এসেছে আস্ত একটা কুমির! মৎস্যজীবীরা তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও নৌকা থেকে চরের উপর ঝাঁপ দিয়ে তাঁরা কুমির ধরতে মরিয়া চেষ্টা চালান। ১০-১২ জন মিলে কুমিরটি ধরেও ফেলেন। তারপর দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে জলের কুমিরকে ডাঙ্গায় তুলে এনে কব্জা করতে তাঁরা সক্ষম হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ। দুপুরে জেলা সদর থেকে সেখানে পৌঁছন বন বিভাগের কর্মীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.