সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: বিশ্বকর্মা পুজোর দিন গ্রাম বাংলায় পালিত হয় অরন্ধন উৎসব। চলতি কথায় যা রান্নাপুজো। যাতে থাকে ঠান্ডা ভাত ও ইলিশের রকমারি পদ। কিন্তু এবার রান্নাপুজোর আগেও দেখা নেই ইলিশের। ফলে মনখারাপ আমবাঙালির।
বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও সমুদ্রে ইলিশের বড়ই আকাল। তার উপর এবার আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ইলিশ মরশুমে বারবার মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে জারি হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। ফলে এখনও সেভাবে পাইকারি ও খুচরো বাজারে ইলিশের দেখা মেলেনি। ইলিশ শিকারিরা যে ইলিশ জালবন্দি করছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই যৎসামান্য। কিন্তু এই সময়টাই বাজারে ব্যাপক ইলিশের চাহিদা থাকে। কারণ গ্রামবাংলায় রান্নাপুজোয় ইলিশ ভাজা ও কচুশাক দিয়ে ইলিশের পদের চচ্চড়ি না হলেই নয়। এ বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “আশা ছিল এবছর চাহিদার সঙ্গে অনেকটাই সামঞ্জস্য রেখে ইলিশের যোগান দেওয়া সম্ভব হবে। মৎস্যজীবীরাও বুক বেঁধেছিলেন আশায় আশায়। কিন্তু কোথায় কি! একের পর এক নিম্নচাপ আর উত্তাল সমুদ্রের জোড়াফলায় দিনের পর দিন নিরাশ হতে হয়েছে মৎস্যজীবীদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারেবারেই ফিরে আসতে হয়েছে তাঁদের একেবারে শূন্য হাতেই।”
এদিকে বুধ ও বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্রবাজার মাছের আড়তে বেশিরভাগই ছোট ইলিশ বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। আড়তদাররা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে এখন যা ইলিশ এসেছে তা বেশিরভাগই ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ। যা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকায়। ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজিপ্রতি মূল্য ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর সামান্য কিছু এক কেজি ওজনের দু’রকম ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আড়তে। ১ কেজি ওজনের স্টোরের ইলিশ নিলাম হচ্ছে কেজিপ্রতি বারোশো টাকায় আর সদ্য ঘাটে ফেরত ট্রলার থেকে আড়তে আসা এক কেজি ওজনের ইলিশের বর্তমান পাইকারি বাজারমূল্য কেজিপ্রতি ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা।
বিজন মাইতি জানান, কয়েকদিন আগের দুর্যোগের সতর্কবার্তা পেয়ে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ডহারবার, রায়দিঘি, নামখানা ও ফ্রেজারগঞ্জের ঘাটে ঘাটে ভেড়া ট্রলারগুলিতে নামমাত্র যে ইলিশ এসেছে সেগুলিই চড়া দামে বিকোচ্ছে খুচরো ও পাইকারি বাজারগুলিতে। তিনি বলেন, সামনেই রান্নাপুজো। যে পুজোয় ইলিশের চাহিদা ওঠে তুঙ্গে। কিন্তু সাম্প্রতিক দুর্যোগে এবারও গভীর সমুদ্র থেকে প্রায় ইলিশশূন্য ট্রলার নিয়েই উপকূলে ফিরতে হয়েছে মৎস্যজীবীদের। তাই বাজারে ইলিশ একেবারে নেই বললেই চলে। যে গুটিকয় ছোট ইলিশ পাইকারি বাজারে বিকোচ্ছে তা সত্যিই অগ্নিমূল্য। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অনেকটাই বাইরে। তবে তিনি আশাবাদী, এখন আবহাওয়া অনুকূলে আসায় ও সমুদ্রের রোষ কমায় মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়েছে। সে কারণেই নতুন আশায় বুক বেঁধে মৎস্যজীবীরা ফের বেরিয়ে পড়েছেন ইলিশ শিকারে। মঙ্গলবার রাত থেকেই একের পর এক ট্রলার গভীর সমুদ্রের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে। সেই ট্রলারগুলি ফিরতে শুরু করলে হয়ত রান্নাপুজোয় ইলিশের আকাল কিছুটা মিটলেও মিটতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.