দেবব্রত মণ্ডল, ক্যানিং: ফের কুলতলির বেনিফেলির জঙ্গলে বাঘের হামলা৷ মৃত মৎস্যজীবি৷ নিহতের নাম কানাই ঘোষ৷ বাড়ি কুলতলি থানার মধ্যগুড়ের গুড়িয়া এলাকায়। রবিবার ৪ জনের একটি মৎস্যজীবীর দল মাছ ধরতে গিয়েছিল সুন্দরবনের জঙ্গল সংলগ্ন নদীতে৷ সেখানেই বাঘের কবলে পড়েন তাঁরা৷ বাঘের হামলায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এক মৎস্যজীবীর৷ দীর্ঘ চেষ্টায় বাঘের মুখ থেকে মৃতদেহটি ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হন তিন মৎসজীবী৷ পরে, দেহটি তুলে দেওয়া হয় কুলতলি থানার পুলিশের হাতে৷ পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়৷ কিন্তু, মাছ ধরতে গিয়ে কীভাবে বাঘের মুখে পড়ে ওই মৎস্যজীবীর দল? নৌকা থেকে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে ঢোকার চেষ্টা হয়েছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে৷
অভিযোগ, মাছ ধরার নামে মৎস্যজীবীদের একাংশ জঙ্গল থেকে মধু কিংবা কাঁকড়া ধরার চেষ্টা করেন৷ মোটা টাকা পাওয়ার আশায় কাঁকড়া ধরতে জঙ্গলে ঢুকে যান মৎস্যজীবীরা৷ জঙ্গলে শিক গুঁজে মাটি খুঁড়লেই মেলে ভাল মানের কাঁকড়া৷ আর সেখানেই ওঁৎ পেতে থাকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার৷ সুযোগ বুঝে শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ৷ ঘটে দুর্ঘটনা৷ এই রেওয়াজ চলছে গত কয়েক দশক ধরেই৷ পেটের টানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে নামতে একপ্রকার বাধ্য হন সুন্দরবনের গোসাবা, কুলতলি, হিঙ্গলগঞ্জ, মথুরাপুর, নামখানা ব্লকের প্রায় দেড় লক্ষ মৎস্যজীবীকে৷ ফলে, বাড়ছে দুর্ঘটনা৷ চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ১০জন মৎস্যজীবীর৷ হামলায় জখম হয়েছেন ১০ জনেরও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির দিন কাটে আর্থিক দুর্দশায়৷ বন্যপ্রাণীর আক্রমণে মৃত্যু হলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও রয়েছে৷ অভিযোগ, সরকারি প্রচারের অভাবে সেই তথ্য জানেন না মৎস্যজীবীদের পরিবারের একাংশ৷ আর জানলেও ক্ষতিপূরণের সেই টাকা পেতে বছর কেটে যায় মৎস্যজীবী পরিবারের৷
[‘ভূত’ তাড়াতে মানসিক রোগী বধূর উপর ৩ দিন অকথ্য অত্যাচার ওঝার]
সুন্দরবন, পাথরপ্রতিমার পশ্চিম দ্বারিকাপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ওয়ার্ল্ডক্রিক নদী। নদীর পাড়েই ২৫০ আদিবাসী পরিবারের বাস৷ সকলের পেশাই জঙ্গলে মাছ আর কাঁকড়া ধরা৷ এ গ্রামের মানুষের কাছে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু নতুন ঘটনা নয়। আবার বাঘের সঙ্গে লড়াই করে আসা মানুষও আছেন। জঙ্গলে বিপদ জেনেও এঁরা ছুটে যান পেটের জ্বালায়। জঙ্গলকে কেন্দ্র করে এঁদের জীবিকা। মূলত মাছ, কাঁকড়া ধরতে যান। ২০০৯-এ বিধ্বংসী আয়লার পর সর্বস্বান্ত কিছু পরিবার এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.