ছবি: প্রতীকী
দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মানতে হল বাঘের মুখে পড়া মৎস্যজীবীকে। শনিবার হাসপাতালে প্রাণ হারান তিনি। এখনও বাঁচার লড়াই চালাচ্ছেন আরেক মৎস্যজীবী।
সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়েছিলেন দুই মৎস্যজীবী খোকন মুন্ডা ও অমল দণ্ডপাট। তাঁদের মধ্যে অমলের বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে ওই মৎস্যজীবীর চিকিৎসার তদারকি করতে যান প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলী। বাঘে আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গেও কথা বলে মৎস্যজীবীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন কান্তিবাবু। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গুরুতর জখম হয়েছিলেন অমল দণ্ডপাট। তাঁর মাথা ও চোখে গভীর চোট লাগে। সেই ক্ষত সহ্য করতে পারল না পঞ্চাশোর্ধ্ব অমল দণ্ডপাটের শরীর। শনিবার রাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
বাঘের হামলার ঘটনায় জখম হওয়া ওই দুই মৎস্যজীবীর বাড়ি কুলতলি ব্লকের মৈপীঠ উপকূল থানা এলাকার নগেনাবাদ গ্রামে। তাঁদের পরিবারের তরফে জানানো হয়, দু’জনে গত বুধবার নগেনাবাদ গ্রাম থেকে ছোট নৌকা নিয়ে গিয়েছিলেন সুন্দরবনের জঙ্গলের ধারে কাঁকড়া ধরতে। এই দলে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন দীপক মণ্ডল নামের আরও এক মৎস্যজীবী। শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন তাঁরা বেনিফিলি জঙ্গলের পাশে রংমারি খালের মধ্যে দিয়ে নৌকা নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই পাল তোলার সময় এই আক্রমণ হয়। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে একটি বাঘ সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁদের নৌকার উপর। বাঘের থাবায় সবথেকে বেশি জখম হন অমল দণ্ডপাটই। বাঘের নখের আচড়ে অমলের মাথা ও মুখে মারাত্মক চোট লাগে। একটি চোখ কার্যত উপড়ে যায়। তার পরেও বাঘের মুখ নিজের হাত দিয়ে আটকে ধরায় বাঘ তাঁর ঘাড় কামড়তে পারেনি।
বাঘটির হাত থেকে অমলকে বাঁচাতে গিয়ে বাঘের নখের আঁচড়ে জখম হন সঙ্গী খোকন মুন্ডা। তাঁদের সঙ্গে থাকা দীপক মন্ডলই মূলত ওই দুজনকে দক্ষিণরায়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। বাঘের পিছনে দু-চার ঘা লাঠি পেটা করতে এবং ভয় দেখাতেই সে নিজের শিকার ছেড়ে পালিয়ে যায় জঙ্গলে। রক্তাক্ত অবস্থায় দুই সঙ্গীকে নিয়ে দীপক ফেরেন গ্রামে। এরপর অমল দণ্ডপাটকে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করতে হয়। খোকন মুন্ডাকে স্থানীয় চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেন।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার সন্ধের মুখে বাঘ ঢোকে গোসাবা ব্লকের কুমিরমারি অঞ্চলের লোকালয়ে। একের পর এক বাঘ সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বন দপ্তরের কপালে। তবে এই বাঘটিকেও শেষমেশ খাঁচাবন্দি করা সম্ভব হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.