ধীমান রায়, কাটোয়া: অসম লড়াইয়ে নিতান্ত দুর্বলকে বোঝাতে যার উপমা টানা হয় সেই ‘পুঁটিমাছ’ বিজয়ার দিন কার্যত ‘হিরো’। ছোট পুঁটিমাছই এখন ইলিশ ও চিংড়িকে টেক্কা দিয়ে একাই ‘রাজা’৷ সবাইকে পিছনে ফেলে শুক্রবার পুঁটিমাছ বিক্রি হল এক হাজার টাকা কিলো দরে। তবে, হাজার টাকা কিলো দরে পাইকারি বাজারে মাছ বিক্রি হলেও পিস হিসাবে বিকোচ্ছে খালাবাজারে৷ পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া, ও ভাতার, গুসকরা-সহ আশপাশের এলাকায় পুঁটিমাছ বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা প্রতি পিস হিসাবে৷ জোড়া ১৫ টাকায়। কিন্তু কেন আজ মহার্ঘ পুঁটিমাছ? বিজয়ার দিন শাস্ত্রমতে গৃহস্থবাড়িতে দেবীকে বিদায় জানিয়ে ‘যাত্রা’ করাতে হয়। এই আচারে পুঁটিমাছ হল খুবই শুভ। এমনই বিশ্বাস। আর ‘যাত্রা’ করানোর পুঁটি খুঁজতে হিমসিম সাধারণ মানুষ৷
বিজয়াদশমীর দিন দেবীকে বিদায় জানানোর সঙ্গে সঙ্গে গৃহস্থবাড়িতে মঙ্গল কামনায় কিছু আচার মানা হয়ে থাকে। তারই অঙ্গ হিসাবে পুঁটিমাছ গ্রামবাংলায় হিন্দুবাড়িতে বিজয়ার দিন লাগে। প্রথা রয়েছে, দেবীর পায়ের সিঁদুর দরজার চৌকাঠে, সিন্ধুক বা ক্যাশবাক্সে লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুঁটিমাছের গায়ে সিঁদুর দিয়ে ‘যাত্রা’ করানো হয়। বাড়িতেও অন্যান্য মাছ রান্না করলেও অল্প হলেও পুঁটি মাছ রান্না করা হয়ে থাকে অধিকাংশ পরিবারে।
[মণ্ডপে ভাঙচুর! তৃণমূল কাউন্সিলরকে বেধড়ক মার স্থানীয়দের]
এদিন সকালে সেই পুঁটিমাছ কিনতে গিয়ে কার্যত মাথায় হাত অনেকের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতার কৃষি বাজারে প্রায় ৩০ জন মাছ বিক্রেতা রয়েছেন। আড়তদার দু’জন। জানা গিয়েছে, এদিন ভাতার কৃষিবাজারে পুঁটিমাছ আমদানি হয়েছে মোট এক কেজি ৮০০ গ্রাম। আড়তদার বিশ্বনাথ প্রামাণিক জানিয়েছে, ওই মাছ পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১০০০ টাকায়। সেই মাছ ভাগ করে নিয়েছেন কয়েকজন মাছ বিক্রেতা। তাঁরা সেগুলি পিস প্রতি ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করেছেন। কাটোয়া বাজারেও এদিন একই দরে বিক্রি হয়েছে পুঁটিমাছ। যেখানে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭০০–৮০০ টাকায়। চিংড়ি ৬০০–৭০০ টাকা প্রতি কিলো বিক্রি হয়েছে।
[আড়াই বছরের শিশুর রহস্যমৃত্যু, ফাঁকা ঘর থেকে উদ্ধার দেহ]
কিন্তু পুঁটিমাছের কেন টান পড়েছে এবার? স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আশ্বিন কার্তিক মাসে পুঁটিমাছ সাধারণত ধানজমি, নালারজলে প্রচুর পাওয়া যায়। নালায় জল বেশি থাকলে অনেকে মাছ ধরার ফাঁদ পাতেন। ফাঁদে ঝাঁকে ঝাঁকে পুঁটিমাছ ধরা দেয়। কিন্তু এবছরে আকাশে বৃষ্টি নেই বললেই চলে। মাঠে জলের টান। তাই চুনোপুঁটি মাছও উধাও। সারবছর যে পুঁটিমাছ এক থেকে দেড়শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, সেই পুঁটি বিজয়াদশমীর দৌলতে শুক্রবার ‘ম্যন অব দ্য ম্যাচ’।
ছবি: জয়ন্ত দাস৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.