অরূপ বসাক,মালবাজার: কথায় বলে, মাছে-ভাতে বাঙালি। তবে চায়ের কাপে তুফান তুলতেও কিন্তু বাঙালির জুড়ি নেই। উত্তরবঙ্গ ছাড়া এ রাজ্যে ভাল চা আর কোথায়ই পাওয়া যায়! স্বাদে ও গন্ধে দার্জিলিংয়ের চা তো জগৎবিখ্যাত। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরেই উত্তরবঙ্গের চা-শিল্পের অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। মজুরি নিয়ে চা-শ্রমিকদের ক্ষোভ বাড়ছে। বন্ধ বহু চা-বাগান। তার ওপর শেষ আটমাসে অশান্ত পাহাড়ে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন চা-ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতিতে চা-শিল্পের হাল ফেরাতে এক অভিনব উদ্যোগ নিল মালবাজারের ওয়াসাবাড়ি চা-বাগান। নববর্ষের সকালে সেতিঝোড়ায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে পাশে চালু হল চায়ের কিয়স্ক। ওয়াসাবাড়ি চা-বাগানের ম্যানেজার সৌরজিৎ পাল চৌধুরি জানিয়েছেন, এই কিয়স্কে কম দামে ভাল মানের চায়ের পাতা পাওয়া যাবে। এমনকী, চাইলে সেই চায়ের স্বাদও নিতে পারবেন ক্রেতারা।
[পাথরের ঘায়ে মরমর অবস্থা, স্থানীয় যুবকদের চেষ্টায় রক্ষা পেল প্যাঙ্গোলিন]
পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা সুন্দরী ডুয়ার্স। তবে এখনকার চা-বাগানগুলিও কম নয়নাভিরাম নয়। পাহাড়ে ঢালে সবুজ চা-গাছের সারি দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা। অনেকে আবার ডুয়ার্সে বেড়াতে এসে এখানকার বাগানের ভাল চা-পাতা কিনতেও চান। কিন্তু, দার্জিলিং, ডুয়ার্স থেকে দেশে-বিদেশে চা-পাতা রপ্তানি হয় ঠিকই। তবে স্থানীয়স্তরে চা বিক্রির তেমন পরিকাঠামো নেই। তাই হতাশ হতে হয় পর্যটকদের। তাই এবার ডুয়ার্সের পর্যটকদের ভাল মানের চা-পাতা উপহার দিতে আস্ত একটি কিয়স্কই খুলে ফেলে মালবাজারের ওয়াসাবাড়ি চা বাগান। সেতিঝোড়ায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে পাশে এই কিয়স্ক মিলবে ভাল মানের চা-পাতা। দামও খুবই সস্তা। বাগানের ম্যানেজার সৌরজিৎ পাল চৌধুরি জানিয়েছেন, পর্যটকদের সুবিধার জন্য ১০০ ও ২৫০ গ্রামের চা-পাতার প্যাকেট করা হয়েছে। ১০০ গ্রামের প্যাকেটের দাম ৪৫ টাকা। মাত্র ১১০ টাকায় পাওয়া যাবে ২৫০ গ্রাম চা-পাতা। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে চায়ের কিয়স্ক। শুধু কেনাই নয়, চায়ের এই কিয়স্কে তৈরি চা-ও পাওয়া যাবে।
[নববর্ষের সকালে খাঁচায় বন্দি পূর্ণবয়স্ক চিতা]
সত্যি কথা বলতে, উত্তরবঙ্গে চা-শিল্পের অবস্থা তো একেবারেই ভাল নয়। চা-পাতা তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন দার্জিলিং, ডুয়ার্স-সহ উত্তরবঙ্গ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। কিন্তু, গত কয়েক বছরে চা-শ্রমিকদের মজুরি সেভাবে বাড়েনি। উলটে একের পর এক চা-বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে শ্রমিকদের দুর্দশা বেড়েছে। অতীতে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বড়সড় আন্দোলন করেছেন চা-শ্রমিকরা। হয়েছে ধর্মঘটও। কিন্তু, তেমন লাভ কিছুই হয়নি। তার উপর গত বছরের মাঝমাঝি পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে কার্যত তাণ্ডব চালিয়েছিলেন বিমল গুরুংয়ের অনুগামীরা। প্রায় দেড়মাস কার্যত অচল ছিল পাহাড়। সেকেন্ড ফ্লাশের চা পাতা তোলাই যায়নি। বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন চা-ব্যবসায়ীরা। চা-ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, আন্দোলন পর্বে ক্ষতির ধাক্কা এখনও পুরোপুরি সামলে ওঠা যায়নি। তাই কিয়স্ক চালু করে যদি বিক্রি বাড়ে, তাহলে মন্দ কী!
[আকাশে উড়ছে পদ্মার ইলিশ! ১০০ টাকায় সীমিত ‘অফার’]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.