অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: মঙ্গলাহাটে অগ্নিকাণ্ডে গ্রেপ্তার স্বঘোষিত হাটমালিক শান্তিরঞ্জন দে। তাঁর বিরুদ্ধে হাটে আগুন লাগানোর অভিযোগ করেছিলেন ব্যাবসায়ীরা। এবার হাওড়া থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন তিনি। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার আদালতে তোলা হবে তাঁকে।
২০ জুলাই রাতে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল বহু প্রাচীন হাওড়ার মঙ্গলাহাটে। পুড়ে খাক হয়ে যায় কয়েক হাজার দোকান। পরদিন ঘটনাস্থলে যান খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তদন্তভার তুলে দেন সিআইডির হাতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই শান্তিরঞ্জন দে-র বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। এমনকী, তাঁর নামে হাওড়া থানায় এফআইআরও করা হয়। তাঁদের দাবি, হাটে আগুন লাগিয়েছেন প্রোমোটার শান্তিরঞ্জন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের ১৮ দিনের মাথায় ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। সিআইডি সূত্রে খবর, সোমবার রাতে হাওড়া থানার সাহায্য নিয়ে কলকাতা থেকে শান্তিরঞ্জনকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার সকালে শান্তিরঞ্জনকে হাওড়া জেলা আদালতে তুলে এক দিনের জন্য তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় সিআইডি।
এই যুক্ত থাকার পিছনে অনেকগুলি কারণ খুঁজে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা জানতে পেরেছেন, মঙ্গলাহাটে শান্তিরঞ্জনের কেয়ারটেকার থাকার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে শান্তিরঞ্জন মঙ্গলাহাটের পোড়াহাট তার জমি বলে যে দাবি করেন সেই জমিও যে এখন তার নয় তা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। আর নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি শেষ হয়ে যাওয়াতেই শান্তিরঞ্জন মঙ্গলাহাটে আগুন লাগিয়ে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, হাতবদল হয়ে হাটের মালিকানা গিয়েছিল শান্তিরঞ্জনের হাতে। অভিযোগ, তিনি হাটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা তুলতেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই এলাকায় হদিশ মিলছিল না অভিযুক্তের। উল্লেখ্য়, মঙ্গলাহাট অগ্নিকাণ্ডে এটাই প্রথম গ্রেপ্তারি। গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় জানিয়েছেন, “আইন আইনের পথে হাঁটবে। দোষ করলে শাস্তি পাবে। শুধু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ নয়, তদন্তে নেমে হয়তো তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তাই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
মঙ্গলবার শান্তিরঞ্জনের গ্রেপ্তারের খবর পেয়েই হাওড়া আদালতের সামনে ধৃতের কড়া শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের করায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিআইডিকে ধন্যবাদ জানান তাঁরা। খুশিতে নিজেদের মধ্যে মিষ্টিও বিতরণ করেন ব্যবসায়ীরা। এই প্রসঙ্গে হাওড়া মঙ্গলাহাট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাজকুমার সাহা বললেন, ‘‘আমরা আগেই বলেছিলাম এই আগুন লাগেনি। চক্রান্ত করে আগুন লাগানো হয়েছে। সিআইডি তদন্তে তা প্রমাণিত হলে। আমরা আশাবাদী এই ঘটনায় যে দোষী তার উপযুক্ত শাস্তি হবে।’’
২০ জুলাই রাত প্রায় সাড়ে ১২টা নাগাদ আগুন লাগে মহানগরী লাগোয়া জেলার এই বিখ্যাত বাজারে। স্থানীয়রাই প্রথমে দেখতে পেয়ে খবর দেন দমকলকে। দাউদাউ আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ১৮ টি ইঞ্জিন। তবে প্রাথমিকভাবে আগুন নেভাতে জলসংকট দেখা দিয়েছিল বলে দমকল কর্মীদের অভিযোগ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। মালিকের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের (Sabotage) অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.