রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: তোর্সা নদীতে স্নান করতে অথবা মাছ ধরতে গিয়েছিলেন কেউ বা কারা। তাঁদের জ্বলন্ত বিড়ির অংশ তোর্সার চর সংলগ্ন তৃণভূমিতে পড়েই দাউদাউ আগুন জ্বলে ওঠে গত রাত্রে। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের দাবানলের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট এমনই। স্রেফ বিড়ির টুকরো থেকেই এত বড় অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়েছে। তবে কার ব্যবহৃত সেই বিড়ি আগুনের উৎস, তা নিয়ে চলছে বিস্তারিত তদন্ত। এ ধরনের অসতর্কতামূলক কাজ বন্ধে বন দপ্তরকে আরও উদ্যোগী হওয়ার দাবি তুলেছে পরিবেশপ্রেমী মহল।
সোমবার রাতে দাবানলের কবলে পড়ে উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া জাতীয় অভয়ারণ্যের মালঙ্গি বিট। তোর্সার তৃণভূমি থেকে আগুন লাগে প্রথমটায়। শুষ্ক জলবায়ুতে অরণ্যের শুকনো পাতা এবং খড়কুটোয় তাই আগুন ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। আগুনের লেলিহান শিখায় আকাশ লাল দেখে আতঙ্কে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন বন্যপ্রাণীরা। মালঙ্গি বিট লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে। তাই গণ্ডার, বাইসনরা লোকালয়ে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়াবহ দাবানলের গ্রাসে চলে যায় ৮ বর্গ কিলোমিটার গভীর জঙ্গল। তবে মঙ্গলবার সকালেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সমস্ত বন্যপ্রাণীরা স্বস্থানে ঠিকমতো আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করেন বনদপ্তরের কর্মীরা।
দিনভর বিস্তীর্ণ জঙ্গলের সমস্তটা ঘুরে দেখে তাঁরা জানিয়েছেন যে গণ্ডার, বাইসন, হাতির মতো বড় বন্যপ্রাণের প্রাণহানি হয়নি। তবে কোনও কোনও ছোট প্রাণী মৃত্যুর কবলে পড়ে থাকতে পারে। তা আরও বিশদে খতিয়ে দেখার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। জলদাপাড়ার ডিএফও কুমার বিমল জানিয়েছেন, তোর্সা নদীতে স্নান কিংবা মাছ ধরতে যাওয়া জঙ্গল সংলগ্ন বাসিন্দাদের দৈনন্দিনতার মধ্যেই পড়ে। তেমনই কেউ হয়ত এদিনও গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বিড়ির স্ফুলিঙ্গই পরিণত হয়েছে দাবানলে।
এই ঘটনার পর পরিবেশপ্রেমীরা দাবি তুলেছেন যে এ ধরনের ‘ম্যান মেড’ অগ্নিকাণ্ড যে কোনও মূল্যে রুখতে হবে। তার জন্য বনদপ্তরের আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করছেন। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলছেন, “অগ্নিকাণ্ডের ফলে এখানকার বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষুদ্র বন্যপ্রাণীরা বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এ ধরনের আগুন থেকে বনাঞ্চলকে রক্ষা করতে হবে।” বিশেষত জলদাপাড়ার মূল আকর্ষণ একশৃঙ্গ গণ্ডার রক্ষায় জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে তাঁর মত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.