চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বন্ধ খনিতে আগুন লেগে আতঙ্ক ছড়াল আসানসোলের জামুড়িয়ায়। সোমবার বেলার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে। খনিগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসছে ঘন কালো ধোঁয়া। কুণ্ডলী পাকিয়ে ওঠা ধোঁয়ায় ডেকেছে এলাকা। কয়েক ফুট দূরের দৃশ্যমানতা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয় জয়নগর ও চুরুলিয়া গ্রামে। বন্ধ খনিটির খুব কাছেই চারটি স্কুল রয়েছে। আতঙ্ক ছড়ালে পড়ুয়াদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে কয়লা খনিতে ধোঁয়ার জেরে কটূ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের শ্বাস প্রশ্বাসেও সমস্যা হচ্ছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন প্রশাসনের আধিকরিকরা। ঘটনাস্থলে গিয়েছেন ইসিএলের আধিকারিকরাও। দমকলের একটি ইঞ্জিন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
জানা গিয়েছে, বন্ধ খনির একটা অংশ জামুরিয়াতে বাকিটা বারাবনিতে রয়েছে। খনির খোলা মুখটি জামুরিয়ার চুরুলিয়াতে। রবিবার থেকেই বন্ধ খনি থেকে হালকা ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। এদিন দুপুর থেকে আচমকাই ধোঁয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। বেলা বাড়তেই ঘন কালো ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে ছেয়ে ফেলে চুরুলিয়া ও জয়নগরের আকাশ। গ্রামের বাসিন্দারা প্রথমে বুঝতে পারেননি। তবে ধোঁয়ার ঘনত্ব বাড়তেই প্রমাদ গোনেন। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা চারটি স্কুলের পড়ুয়াদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। কয়লা খনিটি তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এর আগে বেসরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন নিয়মিত কয়লা তোলার কাজ চলত। মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে ফের রাজ্য সরকারের হাতে চলে যায় খনির মালিকানা। পরে অন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে খনির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই সংস্থারও মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে তিন বছর হল। তারপর থেকে বন্ধ রয়েছে খনির কাজকর্ম। এদিকে সেই খনির খোলামুখ থেকে গলগলিয়ে ধোঁয়া বেরনোর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। খনিগর্ভে আগুন ধরেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
খনি বিশেষজ্ঞদের দাবি, পড়ে থাকা খাদান থেকে কয়লা চুরির কাজ চলছিল। সেই থেকেই আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটেছে। খনির মধ্যে মিথেন গ্যাস রয়েছে। চোরা কারবারিরা বন্ধ খনির বিভিন্ন জায়গাতে গর্ত খুঁড়ে বেআইনিভাবে কয়লা তুলেছে। এলোপাথাড়ি খোঁড়াখুঁড়িতে কয়লা স্তরে চাপ পড়েছে। সেই সঙ্গে গর্তগুলির মুখ উন্মুক্ত রেখেই পালিয়ে গিয়েছে কয়লা কারবারিরা। সেই সব খোলামুখ দিয়ে অক্সিজেন প্রবেশ করেছে খনিগর্ভে। সেই অক্সিজেন ভিতরে থাকা মিথেন গ্যাসের সংস্পর্শে এসে জ্বলতে শুরু করেছে। যতক্ষণ না খনিগর্ভে অক্সিজেনের জোগান বন্ধ হবে, ততক্ষণ আগুন নেভার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.