সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুড়ছে ‘অরণ্য সুন্দরী’ পুরুলিয়া। জ্বলছে ছোটনাগপুর মালভূমি। এ যেন আমাজনেরই পুনরাবৃত্তি। তবুও শিক্ষা নেই এই বনমহলের। লাল আগুনের গ্রাসে বিপন্ন পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে থাকা চিতল হরিণ, হায়না। মাটিতে লুটিয়ে পড়া লাল পলাশের পাপড়িও যাচ্ছে পুড়ে। রেসিডেন্ট দাঁতালরাও আগুনের ভয়ে ঝাড়খন্ডের পথ ধরছে। গত চার-পাঁচ দিন ধরে পুরুলিয়ার ১৩টি বনাঞ্চলে দফায় দফায় আগুন লাগায় পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে অজগর, বনমুরগি, বনবিড়াল ও বুনো খরগোশের মত একাধিক বন্যপ্রাণ। বাস্তুচ্যুত হয়ে চলে আসছে লোকালয়েও। কিন্তু সেখানেও বিপদ। লকডাউনের সুযোগ নিয়ে চোরাশিকারীরা ওঁৎ পেতে আছে। তাদের ফাঁদে পড়ে বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে।
তবে আড়শার পর বলরামপুরেও বুধবার চোরাশিকারীদের কাছ থেকে শিকার করার একাধিক যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করে বনদপ্তর। বাঘমুন্ডিতে বাজেয়াপ্ত হয় আটটি শিমূল গাছের গুড়ি। পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও রামপ্রসাদ বদানা বলেন, “লকডাউনের কারণে সকলে জঙ্গলে চলে যাচ্ছেন বনজ সম্পদ সংগ্রহ করতে ও জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়া চোরাশিকারীরাতো রয়েইছে।তাই জঙ্গলে দিন-রাত যেমন আমাদের টহল চলছে তেমনই চলছে মাইকিং।” কিন্তু কে শোনে কার কথা! ফলে দাউদাউ করে জ্বলছে অযোধ্যা, বাঘমুন্ডি, মাঠা, ঝালদা, কোটশিলা, আড়শা, বলরামপুর, জয়পুর, রঘুনাথপুর, মানবাজার এক, বান্দোয়ান এক, বান্দোয়ান দুই, যমুনা বনাঞ্চলের একাংশ। এই ঘন-দুর্গম জঙ্গলগুলিতে দমকলের ইঞ্জিন না ঢুকতে পারায় সমস্যা আরও বেড়েছে। ফলে যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যরাই জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন দিন-রাত। আগুন নেভাতে রাত জাগতে হচ্ছে বনকর্মী থেকে আধিকারকিদেরও।
ফি বছরই বসন্ত শেষে বনমহলের জেলাগুলির বনাঞ্চল এভাবে জ্বলতে থাকে। আসলে এই সময় জঙ্গলে থাকা বিছুটি (আলকুশি)-র ফল থেকে একধরনের রোঁয়া বার হতে থাকে। সেগুলি যাতে না ছড়ায় তাই আগুন ধরিয়ে দেয়। তাছাড়া এই সময় মহুলের মরশুম।
তাই পুরুলিয়ার জঙ্গলে যেন এক অন্যরকম মাদকতা। তাপ বাড়লে এই ফল সহজেই গাছ থেকে পড়ে। তাই ওই গাছগুলির চারপাশে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে আগুন। সেইসঙ্গে বন্যপ্রাণ শিকারের জন্য আগুন ধরাচ্ছে চোরাশিকারীরা। জঙ্গলে একবার আগুন লেগে গেলে তা নেভানোই যাচ্ছে না। সারারাত ধরে পুড়ছে গাছগাছালি। জঙ্গল ও বন্যপ্রান নিয়ে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় কাজ করা একটি সংস্থার তরফে অনির্বাণ পাত্র বলেন, “এ তো দেখছি সমগ্র মালভূমি জ্বলছে একসাথে। কীভাবে ঘটছে এই ঘটনা। প্রশাসনের পদক্ষেপ চাই।”
ছবি: অমিত সিংদেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.