সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: বর্তমানে বিজেপি (BJP) নেতাদের ‘পাপ’ কি বইতে হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমকে (SBSTC)? তা জানতে এবার আইনের দ্বারস্থ নিগম। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড অপব্যবহার করে টিকিট বিক্রি নিগমেরই টিকিট বুকিং এজেন্টের বিরুদ্ধে। অতিরিক্ত সাড়ে ৭ কোটি টাকার উপরে বিক্রি টিকিটের টাকাই জমা পড়েনি দপ্তরে। ওই এজেন্সির বিরুদ্ধে দুর্গাপুরের (Durgapur)কোকওভেন থানায় অভিযোগ জানালেন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার এমডি ময়ূরী ভাসু। পাল্টা নিগমের বিরুদ্ধে মামলা অভিযুক্ত এজেন্সির।
অভিযোগ, ২০০৭ সাল থেকে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের ‘নিউ ইউরেকা ট্রাভেলস ক্লাব’ দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বুকিং এজেন্ট হিসাবে বরাত পায়। নিগম ২০১৪ সালে ওয়েবেলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘ইন্ট্রিগেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম'(আইটিএমএস) পদ্ধতি চালু করে। এই ‘ওয়েব বেসড প্ল্যাটফর্ম’-এর মাধ্যমে টিকিট বিক্রি চালু করে নিগম। নিগমের প্রিন্সিপাল ই-টিকিট বুকিং এজেন্টেরও বরাত হাসিল করে অভিযুক্ত এজেন্সি। পশ্চিম বর্ধমান, বহরমপুর, মালদা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, কলকাতা, হাওড়া, আসানসোল ও সিউড়ি থেকে টিকিট বিক্রি (Ticket sale) করেছিল অভিযুক্ত এই এজেন্সি। ২০১৪ সাল থেকে দফায় দফায় অভিযুক্ত এজেন্সি এই টেন্ডার মারফত টিকিট বিক্রির বরাত পেয়েছে বলেও অভিযোগ। সেই ২০১৪ সাল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত নিগমের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড (Password) অপব্যবহার করে ৭ কোটি ১৯ লক্ষ ১০ হাজার ৬৪৬ টাকার তছরুপ করেছে বলে অভিযোগ দায়ের করেছে নিগম।
কী করে এই বিপুল পরিমাণ টাকা তছরুপ হল? নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, টিকিট বিক্রির আগে টাকা জমা দিতে হয় নিগমকে। এই ‘প্রিপেড’ পদ্ধতিতে ১ লক্ষ টাকা জমা করলে তবেই ১ লক্ষ টাকার টিকিট বিক্রি করা যায়। আর এখানেই অভিযুক্ত এজেন্সি সেই ‘আইটিএমএস’ সফটওয়্যার জালিয়াতি (Fraud) করে অধিক টিকিট বিক্রি করেও সেই টাকা জমা দেয়নি নিগমকে। একাধিকবার সংস্থাকে সতর্ক করা হলেও কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। নিগমের অন্তর্বর্তী তদন্ত ও অডিট করে এই আর্থিক গরমিল প্রকাশ পায়। অবশেষে ২৩ নভেম্বর ওই এজেন্সির বিরুদ্ধে কোকওভেন থানায় আর্থিক প্রতারণা-সহ পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করেন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ময়ূরী ভাসু।
যদিও অভিযুক্ত এজেন্সি ‘নিউ ইউরেকা ট্রাভেলস ক্লাব’ নিগমের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta HC) ট্রাইবুনালে সেই মামলা চলছে। অভিযুক্ত এজেন্সির ম্যানেজার অমরেশ মণ্ডলের কথায়, “ওদের সফটওয়্যার। আমরা অপব্যবহার করব কীভাবে? এটা ওদের সার্ভারের সমস্যা। যার ফল এখন আমাদের ভুগতে হচ্ছে।” এই দুর্নীতি শুরু তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী ও বর্তমানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ও তৎকালীন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান দীপ্তাংশু চৌধুরীর সময় থেকেই। দুজনেই ২০২১ সালের আগে বিজেপিতে যোগ দেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে দীপ্তাংশু দুর্গাপুর পূর্বে বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন।
রাজ্যের বর্তমান পরিবহণ মন্ত্রী (Minister) স্নেহাশিস চক্রবর্তী এই দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা এসে এই দুর্নীতির খোঁজ পেয়েছি। এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছি। এত বড় দুর্নীতি করে গিয়েছে! এই দুর্নীতি যখন শুরু হয়েছে তখন পরিবহণ মন্ত্রী ও চেয়ারম্যান এখন অন্য দলের। তাঁদেরও যোগসাজস আছে কিনা, তা তদন্ত সাপেক্ষ। এই কারণেই আইনের দ্বারস্থ হই আমরা।” এদিকে এই ইস্যুতে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)দুর্গাপুরে বলেন, “রাজ্যে সবেতেই দুর্নীতি চলছে। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থাতেও দুর্নীতি হয়েছে। তদন্ত চলছে, সবাই শাস্তি পাবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.