শাহাজাদ হোসেন, ফরাক্কা: সরকারি প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হতেই প্রাক্তন তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে দায়ের হল এফআইআর। জেলাশাসকের নির্দেশ মেনেই ফরাক্কা ব্লকের অর্জুনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ। পাশাপাশি পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট, নির্মাণ সহায়ক ও পঞ্চায়েত সচিবকেও শোকজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই খবর। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধান।
ফরাক্কা ব্লকের অর্জুনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ওয়াহিদা খাতুন। আগেরবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জয়লাভ করেন তিনি। তাঁর স্বামী বদরুল ইসলাম এবার অর্জুনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের টিকিটে জিতে উপপ্রধান হয়েছেন। অভিযোগ, ওয়াহিদা খাতুন প্রধান থাকার সময় অর্জুনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান ও অন্য কিছু সদস্য পুকুর খনন, বাঁধ নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ প্রভৃতি প্রকল্পের কয়েক কোটি টাকা কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছেন। খোদাবন্দপুর থেকে অর্জুনপুর পর্যন্ত গঙ্গার ধারে পাকা রাস্তা রয়েছে। অথচ সেখানে মাটির বাঁধ তৈরি করা হয়েছে দেখিয়ে প্রধান ও তাঁর দলবল টাকা তুলে নিয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়, পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ‘সোলার লাইট’ ও ‘স্ট্রিট লাইট’ বসানো হয়েছে দেখিয়ে প্রধান টাকা তুলেছিলেন। অথচ সেখানে কোনও কাজই হয়নি। বেশ কিছু রাস্তাকে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে দেখিয়ে টাকা তুলেছিলেন প্রধান। একইভাবে পুরনো ড্রেনকে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মস্মাৎ করা হয়েছিল। অভিযোগ, ৫ বছর প্রধান পদে থাকার সময় প্রায় তিন কোটি টাকার দুর্নীতি করেছিলেন ওয়াহিদা খাতুন। ২০২২ সালের প্রথম দিকে স্থানীয়রা এই দুর্নীতির খবর স্থানীয় বিডিও, এসডিও ও জেলাশাসককে লিখিতভাবে জানায়। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় ২০২৩ সালে জানুয়ারি মাসে তাঁরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
হাই কোর্টের নির্দেশে জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র মামলার আবেদনকারী হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দা লালমহম্মদ বিশ্বাস ও অভিযুক্তপক্ষকে তাঁর চেম্বার ডেকে পাঠান। যদিও কোনও পঞ্চায়েত আধিকারিক বা প্রধান ওই শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না। জেলাশাসকের নির্দেশে তিনদিন ধরে অর্জুনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একটি তদন্তকারী রিপোর্ট জেলাশাসককে জমা দেন। জানা গিয়েছে, তদন্তকারী কমিটি প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার দুর্নীতির সন্ধান পেয়েছিল। তবে আর্থিক দুর্নীতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকার কম নয় বলেই দাবি স্থানীয়দের। হাই কোর্টের নির্দেশের পর জেলাশাসক, বিডিওকে প্রধানের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন।
যদিও প্রাক্তন প্রধানের স্বামী তথা বর্তমান গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান বদরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে জানান, “জেলাশাসক আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিডিওকে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন এমন কোনওখবর আমার জানা নেই।” ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, “শুনেছি জেলাশাসক অর্জুনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন। আইন আইনের পথে চলবে। যদি কেউ দুর্নীতি করে থাকেন তাহলে তার সাজা হবে। দল কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.