সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সরকারি প্রকল্পে টাকা চাওয়ার অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখে এফআইআর করা হবে। পুরুলিয়ায় পুঞ্চা ব্লক প্রশাসনের মনিটরিং বৈঠকে এমনই কড়া বার্তা দিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের টিম যেভাবে ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের কথা শুনছেন। সেই দাবি মোতাবেক পরিকল্পনা করে কাজ করা হচ্ছে কি না। প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে কিনা, তা দেখতেই এবার ব্লকে ব্লকে সমস্ত দপ্তরের সঙ্গে সভাধিপতি বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে। ‘গো টু ভিলেজ’-র মতই প্রতি সপ্তাহে একটি করে ব্লকে এই বৈঠক হবে।
পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে এদিন দশটি দপ্তরকে নিয়ে বৈঠক করে সভাধিপতি। তিনি কড়া ভাষায় বলেন, “আমি বিডিওকে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি কোনও সরকারি প্রকল্পে কেউ কোন টাকা চাইলে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তকে নিয়ে বিষয়টির তদন্ত করুন। সেই শুনানিতে কী উঠে আসছে তার প্রেক্ষিতে এফআইআর করা হবে। সরকারি প্রকল্প নিয়ে কোনওরকম বেনিয়ম আমরা আর বরদাস্ত করব না।”
জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া জেলায় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়া হয়েছে। সেই অভিযোগ যেমন শাসক দলের বিরুদ্ধে উঠেছে। তেমনই পঞ্চায়েত স্তরে অন্যান্য রাজনৈতিক দল-সহ সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পঞ্চায়েত-সহ লোকসভা নির্বাচনে। তাই সরকারি প্রকল্পে এই বেনিয়ম ঠেকাতে এবার বিডিওদের মাঠে নামাচ্ছে প্রশাসন। পুরুলিয়া জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুঞ্চা ব্লক থেকে শুরু হওয়া সভাধিপতির এই মনিটরিং বৈঠক আগে দক্ষিণ পুরুলিয়ায় হবে। তারপর ঝালদা ও রঘুনাথপুর মহকুমার ব্লক গুলিতে ধাপে ধাপে বৈঠক করবেন।
এদিন দশটি দপ্তরকে ধরে ধরে ওই ব্লকের কাজ দেখেন সভাধিপতি। সেই সঙ্গে প্রত্যেকটি দপ্তরের কাজের টার্গেট বেঁধে দেন। দেখা যায় এই ব্লকে মিশন নির্মল বাংলার কাজ অনেকটাই পিছিয়ে। জেলার প্রায় সর্বত্রই শৌচাগার তৈরি করার পরেও ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে সেগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বৈঠকেই সভাধিপতি বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিধি মোতাবেক চতুর্থ ও চতুর্দশ অর্থ কমিশনের জনস্বাস্থ্যের কাজে ব্যবহার করা দশ শতাংশ টাকা দিয়ে ওই শৌচাগারগুলি মেরামত করে তা ব্যবহার যোগ্য করে তোলা হবে। এই কাজের তিরিশ শতাংশ টাকা আমরা প্রাপকদের কাছ থেকে নেব।”
এদিনের বৈঠকেই পুঞ্চার বিডিও অনিন্দ ভট্টাচার্য বলেন, “যদি দেখা যায় কোনও সরকারি কর্মী শৌচালয় ব্যবহার করেন না, তাহলেও কিন্তু আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।” এদিনের বৈঠকে দশটি দপ্তরের আধিকারিকরা ছাড়াও ছিলেন ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরাও। বাংলা আবাস যোজনায় প্রাপকরা তাঁদের বাড়ি তৈরি করতে যদি কোন সমস্যায় পড়েন। কোনও কারণে যদি মাঝপথে বাড়ি তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত স্তরের প্রতিনিধিদেরকে পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন সভাধিপতি।
তবে প্রশাসনের ‘গো টু ভিলেজ’ ও সেই সঙ্গে সভাধিপতির ব্লকে ব্লকে প্রশাসনের মনিটরিং বৈঠক নিয়ে কটাক্ষ করেছে জেলা বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “লোকসভা ভোটে এই জেলায় তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে। সাধারন মানুষ আর তৃণমূলের নেতা-কর্মীর কথা শুনছেন না। এমনকি বিশ্বাসও করতে পারছেন না। তাই তৃণমূলের হয়ে প্রশাসনকে এভাবে নামানো হচ্ছে।”
ছবি: সুনীতা সিং
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.